চিকিৎসক ছাড়াই চলছে আজমিরীগঞ্জের চারটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র

হবিগঞ্জ

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার চারটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র যেন নিজেরাই রোগীতে পরিণত হয়েছে। অত্যাধুনিক হাসপাতাল ভবন আর কোয়ার্টার থাকলেও নেই কোন ডাক্তার। শত শত রোগী আসলেও হাসপাতালে আসেন না কোন চিকিৎসক। চিকিৎসা সেবায় আয়া আর ফার্মাসিষ্টই একমাত্র ভরসা। দুইটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং দুটি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে বিদ্ধমান। ডাক্তাররা থাকেন প্রাইভেট ক্লিনিক আর চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত।

৪টি চিকিৎসা কেন্দ্র থাকলেও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ। কাগজে পত্রে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া থাকলেও চিকিৎসকরা ওই কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিতে যাচ্ছেন না। চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাওরাঞ্চল উপজেলার চার ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন কেন্দ্রগুলোতে আমাদের কোন রুটিন সেটআপ না থাকায় আমরা যাচ্ছি না। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটি করতে হচ্ছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসকদের রুটিন করে দেয়ার পরও কেন তারা সেখানে যান না সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

সরেজমিনে উপজেলার শিবপাশা, জলসুখা, বদলপুর, কাকাইলছেও ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় মিডওয়াইফ দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ফার্মাসিস্ট থাকার কথা। কিন্তু এই চার কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট নেই।

সেবাগ্রহীতা কয়েকজন জানান, বিভিন্ন সময়ে এখানে আসলেও আমরা চিকিৎসক পাই না। যারা থাকেন তারাই আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তাদের পদবী কি, তা আমরা জানি না।

শিবপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা কুদ্দুছ মিয়া বলেন, চিকিৎসা সেবা নিতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসি কিন্তু কোনদিন ডাক্তার পাইনি। জলসুখা গ্রামের টিটু মিয়া বলেন, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক আসেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা অন্য জায়গায় চিকিৎসা নেই।

বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরের বাসিন্দা প্রনব দাস ও বিজয় দাস বলেন, মাসে দুই মাসে একদিন ডাক্তার আসে। কোন মাসে আসেনও না।

উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ফেরত আসতে হয়। না মিলে চিকিৎসা না মিলে ঔষধ।

এ বিষয়ে জানতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দাযিত্বে থাকা চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমাদের কোন রুটিন করে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আপনি স্যারের (টিএইচও) সাথে কথা বলুন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৯ জন চিকিৎসক রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সংকট থাকায় সমন্বয় করে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর জন্য রুটিন করে চিকিৎসক দেয়া আছে। তারা কেন যাচ্ছেন না বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল হক বলেন, চিকিৎসক সংকট রয়েছে। আমরা প্রথমেই ২৫০ শয্যা হাসপাতালকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তারপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে প্রাধান্য দেই। জেলা সদর ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করি আগে। তারপর সমন্বয় করে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাই। একেবারে চিকিৎসা কার্যক্রম কোথাও বন্ধ নেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *