চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের জন্মদিন

সিলেট

অধ্যাপক ডা: মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লিভার বিশেষজ্ঞ। শুধু তা-ই নয়, তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন একটি অনন্য উচ্চতায়। তিনি পদচারণা করেননি এমন কোন ক্ষেত্রে নেই। সামাজিক, রাজনীতি, বুদ্ধিজীবী মহল, কলাম লেখক, টক শো বক্তাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সরব উপস্থিতি।

বর্তমানে তিনি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’-এর সদস্য সচিব হিসেবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে একজন সৈনিক হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে গণমাধ্যমে রেখে যাচ্ছেন জোরালো ভূমিকা।

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের জন্মদিন আজ। দেশের এই অন্যতম হেপাটোলজিস্ট, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, লেখক-কলামিস্ট ২২ আগস্ট ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ডা. স্বপ্নীলের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পিয়ার-রিভিউড জার্নালে ২৯০টি প্রকাশনা আছে। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

১৯৯৮ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে এমএসসিসহ স্নাতক হন এবং ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজিতে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন ডা. স্বপ্নীল।

তিনি NASVAC-এর ফেজ I/II এবং III ক্লিনিকাল স্টাডিজের প্রধান গবেষক। ২০১৯ সালে NASVAC আবিষ্কারের জন্য কিউবান একাডেমি অব সায়েন্সেস থেকে যৌথভাবে ‘প্রিমিও ন্যাসিওনাল’ পুরস্কার অর্জন করেন। NASVAC উদ্ভাবনের পাশাপাশি সারা দেশে লিভারের রোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষুধটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে প্রদানের লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি GBPD060 ক্লিনিকাল স্টাডির বাংলাদেশের প্রধান গবেষক।

ডা. স্বপ্নীল একজন সংগঠকও। ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভরের সাধারণ সম্পাদক, ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারের চেয়ারম্যান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অর্থ সম্পাদক।

ডা. স্বপ্নীলের বাবা মরহুম মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। মা আয়েশা মাহতাব একজন গৃহিণী। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী তার স্ত্রী। তাদের দুটি সন্তান আছে।

পৈতৃক নিবাস সিলেট হলেও ডা. স্বপ্নীল প্রথম জীবন ঢাকায় কাটিয়েছেন। ইংরেজি মাধ্যম কিন্ডারগার্টেন রোজি অ্যান সেন্টারে স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয়। পরবর্তীতে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল থেকে ১৯৮৫ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পাস করেন। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

১৯৮৫ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন ডা. স্বপ্নীল। ১৯৯৮ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে এমএসসি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হেপাটোলজিতে এমডি করেন। তিনি লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস, আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস, ইন্ডিয়ান কলেজ অব ফিজিশিয়ান এবং আমেরিকান কলেজ অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির একজন ফেলো। ২০২১ সালে ইউনিভার্সিটি অব মালয়া, মালয়েশিয়া থেকে ডক্টর অব ফিলোসফি ডিগ্রি লাভ করেন।

বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি জাপানের এহিম ইউনিভার্সিটির গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং মেটাবোলজি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছেন এবং সদস্য, বোর্ড অব স্টাডিজ, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস, ঋষিকেশ, ভারত। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ভাইরাল হেপাটাইটিস সম্পর্কিত কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা গ্রুপের সদস্য।

তিনি হেনরি কিসিঞ্জারের ‘হোয়াইট হাউস ইয়ার্স: দ্য টিল্ট-দ্য ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ক্রাইসিস অব ১৯৭১’ (পাক ভারত যুদ্ধ ১৯৭১) এবং মেজর জেনারেলের ‘বাংলাদেশে বিজয়’ (একাত্তরের বিজয়) এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছেন। (অব.) লছমন সিং।

সম্প্রতি তার লেখা প্রকাশিত বইগুলো হলো- ‘সেকাল একালের সিদ্ধান্ত’, ‘এখন স্বপ্ন বাংলাদেশ’, ‘পথ হারাবে না বাংলাদেশ’, ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘লিভার চিকিৎসা নতুন সম্ভাবনা’।

ডা. স্বপ্নীল তার বর্ণাঢ্য জীবনে নানা পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিউবান একাডেমি অব সায়েন্সেস থেকে ‘প্রিমিও ন্যাসিওনাল’ পুরস্কার, ইউরো-এশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ‘অর্ডার অব মেরিট’ পুরস্কার, কলিঙ্গা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ফাউন্ডেশন ভারত কর্তৃক প্রদত্ত ‘ব্লুমবার্গ অরেশন ২০১৫’, ভেনাস রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ভারত থেকে ‘বিশিষ্ট বিজ্ঞানী পুরস্কার’, মারকুইস হু’স হু থেকে ‘আলবার্ট নেলসন মারকুইস লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ থেকে ‘বিশুদ্ধানন্দ স্বর্ণপদক অর্জন করেন।

ডা. স্বপ্নীল কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে তার অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ওয়ালটন গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে ‘হেলথ কেয়ার হিরোস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’, বাংলাদেশ আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইয়ুথ কমার্স কমিউনিকেশন থেকে ‘গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ আন্তর্জাতিক ‘Wonca গ্লোবাল হেলথকেয়ার লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০১১’, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান (ওনকা)-এর ‘কোভিড-১৯ হিরো’ পুরস্কার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *