চুনারুঘাটে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে নারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপ

হবিগঞ্জ

অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এক নারীকে (৩০) বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপ করে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে একটি গ্রাম্য সালিসে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে নির্যাতনের শিকার ওই নারী থানায় মামলা করেছেন।

মামলার পর পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হাফেজ নুরুল ইসলাম (৩০), স্থানীয় বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেন (৭০), আকবর আলী (৬৯) ও আতিক উল্লাহ (৫০)। ভুক্তভোগী নারী ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলার একটি গ্রামে ওই নারীর বাড়ি। উপজেলার আরেকটি গ্রামের এক অটোরিকশাচালকের (২৭) সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি ওই নারীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের কয়েকটি ভিডিও গ্রামবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেন ওই অটোরিকশাচালক। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই নারীর ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ নিয়ে গত সোমবার রাতে ওই গ্রামে সালিস বৈঠক হয়। স্থানীয় বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেনের সভাপতিত্বে সালিসে নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সালিসে ওই নারী পরকীয়ায় জড়িয়ে অপরাধ করেছেন মর্মে শাস্তি হিসেবে ৮২টি বেত্রাঘাত ও ৮০টি পাথর নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সেই অনুয়ায়ী স্থানীয় আকবর আলী (৬৮) ওই নারীকে একে একে ৮২টি বেত্রাঘাত করেন। একই সময় উপস্থিত সবাই পাথর নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই নারী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ওমানপ্রবাসী। সালিস থেকে ওই নারীকে এক মাস ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয় এবং বলা হয়, ঘর থেকে বের হলে শাস্তি আরও ভয়াবহ হবে। ভুক্তভোগী নারী ভয়ে ঘরে আবদ্ধ থেকে চিকিৎসা নেন।

এদিকে স্ত্রীর নির্যাতনের খবর পেয়ে ওমানপ্রবাসী স্বামী গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসেন। নির্যাতনের বিষয়ে বিচারের জন্য তিনি আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে গ্রামবাসী ওই প্রবাসীকে বাধা দেন।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, ‘অপরাধ যদি হয়, নারী-পুরুষ উভয়ই করেছেন। গ্রামবাসী শুধু নারীর বিচার করেছেন। অথচ যিনি ভিডিও ছড়িয়ে আমার স্ত্রীকে হেয় করেছেন, তার বিচার কে করবে?’

নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, পূর্বপরিচিত হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন সময় তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন ওই অটোরিকশাচালক। তিনি বিভিন্ন সময় তাকে (ভুক্তভোগী) প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন। গোপনে ওই ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত মুহূর্তের কয়েকটি ভিডিও করেন কোনো এক সময়। সেই ভিডিও দেখিয়ে প্রচার করেছেন, তার সঙ্গে ওই ব্যক্তির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার কারণেই তিনি সমাজে অভিযুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ঘটনার খবর পেয়ে তার স্বামী দ্রুত বাড়িতে আসেন। গ্রামবাসী তাকেও ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

ঘটনার পর থেকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া ওই অটোরিকশাচালক এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

চুনারুঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তাক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ওই নারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে বেশ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *