চোখের পলকে সব শেষ, চিরদিন দায়ী থেকে যাবো: ইউটিউবার আর এস ফাহিম

জাতীয়

ছাদ খোলা প্রাইভেটকারে চড়ে ঐতিহ্যবাহী ব্রিজের ভিডিও করার সময় লোহার পাইপে আঘাত পেয়ে নিহত হন রবিউল আজিম তনু (২৫) নামে এক যুবক। শনিবার (৮ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী ইলিয়ট ব্রিজে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। রবিউল সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে।

জানা গেছে, শহরের এসএস রোডে একটি রেস্টুরেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দাওয়াতে সিরাজগঞ্জ আসেন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর আর এস ফাহিম চৌধুরী ও তার সঙ্গীরা। সকালে আর এস ফাহিম চৌধুরীর ক্যামেরাম্যান একটি ছাদ খোলা জীপে শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ভিডিও সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় রেস্টুরেন্টটির মালিক মঈন উদ্দিন তাদের বন্ধু সৌহার্দ্য, শোভন এবং জয়নাল আবেদিন সঙ্গে ছিলেন। এস এস রোড প্রান্ত দিয়ে ইলিয়ট ব্রিজের ভিডিও নেয়ার জন্য রবিউল গাড়ির ছাদ খুলে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় ইলিয়ট ব্রিজের প্রবেশ বারে রবিউল মাথায় ধাক্কা খান। এতে গুরুতর আহত হন তিনি।
আজিমের মৃত্যুতে মর্মাহত দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর আর এস ফাহিম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হৃদয়স্পর্শী পোস্ট করেছেন। এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর লিখেছেন, শনিবার ভোর ৫টা ৩০মিনিটের দিকে আমাদের আজিম দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন) কিভাবে বর্ণনা করবো কিছুই বুঝতে পারতেছি না। বার বার মনে হচ্ছে সব কিছু কেমন জানি একটি দুঃস্বপ্ন এর মতো। কিন্তু কিভাবে নিজেকে বুঝাব যে ভাইটি আর নেই। চোখের সামনে সব দেখেছি ভাই যা কোনোদিন ও বুঝাতে পারবো না তাই সংক্ষেপে একটু বর্ণনা করি।

পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, আমরা ঠিক ফজরের আজানের সময় সিরাজগঞ্জ কড্ডার মোরে পৌঁছে হালকা কিছু খাবার খাই সবাই মিলে। এরপর আমরা ক্রস বাঁধ ৩-এ যাই সেখান এ আজিম তার মতো করে শুট নিতে ব্যস্ত ছিল ব্লগের জন্য। তারপর কিছু সময় কাটাই সেখানে এরপর আমরা রওনা হই হোটেল এ যাওয়ার উদ্দেশে। যাওয়ার পথে সে সামনের একটি গাড়িতে উঠে। এরপর গাড়ির ছাদের খোলা অংশ দিয়ে (Sunroof) দিয়ে বের হয়ে শুট নিচ্ছিল। এর মধ্যে এসএস রোড দিয়ে বড়পোল পার হওয়ার সময় উপরে থাকা লোহার যে বারটি রয়েছে (Hieght বার) বলা হয় যাকে (sunroof) এ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে মাথায় এবং বুকে সজোরে আঘাত হানে। উল্টো হয়ে ফিরে থাকার কারণে সে ও বুঝতে পারেনি যার কারণে আঘাতটা সরাসরি তার মাথার পেছন দিকে লাগে। মাথার পেছনে আঘাত লাগার ফলে তৎক্ষণাৎ সে সেখানে গাড়ির ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পরে।

তৎক্ষণাৎ ২-৩ মিনিটের মধ্যে আমরা সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল পৌঁছাই সেখানে নেয়ার আগেই আমাদের ভাই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে। তার জন্য কিছু করার সুযোগটা ও পায় নাই। চোখের পলকে সব শেষ হয়ে গেলো। চিরদিন দায়ী থেকে যাবো। দুই মাস আগে আজিম বাবা হারা হয়েছে। এই ছেলেটির চলে যাওয়া তার মাকে জানানোর মতো কষ্ট কখন ও বুঝতে পারব না।

দূর থেকে অনেকে অনেক মতামতই করবে কিন্তু সব নিজ চোখের সামনে হয়েছে ১০০০ কথা লিখে ও কাউকে বুঝাতে পারবো না। আমরা সকাল থেকে হাসপাতাল এবং প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম শেষ করে লাশ নিয়ে এখন সাতক্ষিরার পথে।

সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, শহরের এসএস রোড এলাকার বন্ধু মুখলেসুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে রবিউল ও অপর এক বন্ধু ভোরে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে ইলিয়ট ব্রিজের ওপরে যান। তিনি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। রবিউল গাড়ির ছাদ খুলে দাঁড়িয়ে ব্রিজের ভিডিও করছিলেন। হঠাৎ তিনি ব্রিজের লোহার পাইপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন।

বন্ধুরা রবিউলকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, ইলিয়ট ব্রিজটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। এখনো এটি কালের সাক্ষী হয়ে আছে। স্থানীয়ভাবে এটাকে বড়পুল বলে ডাকা হয়। এর আগে ব্রিজটির বয়স হওয়ায় এটাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ব্রিজের ওপর দিয়ে ভারী ও বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে ব্রিজের দুই পাশে লোহার মোটা পাইপ লাগানো হয়।

ইলিয়ট ব্রিজের বিশেষত্ব হচ্ছে এর কোনো পিলার নেই। ১৮০ ফুট লম্বা ও ১৬ ফুট চওড়া এই ব্রিজটির পুরোটাই আর্চ করে খালের দুই পাড়ের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *