চৌহাট্টায় সিসি ক্যামেরার মুখে বাঁশ

সিলেট

প্রতিদিনের মতো অফিস শেষে বাসায় ফিরছি। চৌহাট্টা পয়েন্টে এক কাপ চায়ের জন্য ছোট্ট বিরতি নেওয়া হয়। আগেই চায়ের আড্ডায় থাকা বন্ধুদের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করলাম। কিছুক্ষণ আড্ডার পর বাড়ি ফেরা,-এই রুটিন চলছে রমজানের আগে থেকেই।

ঈদের বাজার উপলক্ষে নগরীর শপিং মলগুলো লোকে লোকারণ্য। রাত সাড়ে ১১টায় যানজট ঠেলে প্রায় ৩৫ মিনিটে বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পয়েন্টে পৌঁছালাম। চায়ের আড্ডার মাঝেই হঠাৎ সহকর্মী সুমন রসিকতার সুরে বললো, “দেখো দেখো, সিসি ক্যামেরার মুখে বাঁশ দিয়েছে।” দৃষ্টি গেল আলিয়া মাদ্রাসার গেটের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাগানো সিসি ক্যামেরার দিকে। সত্যিই তাই! চৌহাট্টা পয়েন্টের পূর্ব পাশে সড়কের মাঝখানের খুঁটিতে লাগানো সিসি ক্যামেরার সামনে বাঁশ দিয়ে তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে নির্মিত এই তোরণে তখনও কাপড় পরানো হয়নি। বাঁশের কাঠামোর কারণে সিসি ক্যামেরার সামনের অংশ ঢেকে গেছে, আর কাপড় পরানো হলে এটি পুরোপুরি ঢেকে যাবে। অর্থাৎ, তোরণ যতদিন থাকবে, ততদিন চৌহাট্টা পয়েন্টের ওই সিসি ক্যামেরাটি কার্যকর থাকবে না। নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে “ডিজিটাল সিলেট সিটি” প্রকল্পের আওতায় সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় ১১০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়, যার মধ্যে ১০টি ছিল ‘ফেস রিকগনিশন’ প্রযুক্তির। যদিও ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) নগরীর নাইওরপুল ও উপশহর পয়েন্টে উন্নত প্রযুক্তির পিটিজেড সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করেছিল।

বর্তমানে নগরীতে Face Recognition (FR) (মুখ শনাক্তকরণ) প্রযুক্তির সিসি ক্যামেরা কুমারপাড়ায় ১টি এবং দরগা, ক্বীন ব্রিজ, রেল স্টেশনে ২টি করে মোট ৭টি সচল রয়েছে। Automatic Number Plate Recognition (ANPR) (স্বয়ংক্রিয় নাম্বার প্লেট শনাক্তকরণ) ক্যামেরার মধ্যে বিজিবি পয়েন্টে ১টি, এয়ারপোর্টে ২টি, কাজিরবাজারে ২টি, শাহজালাল ব্রিজে ১টি এবং মেন্দিবাগে ১টি স্থাপন করা হয়েছে, যা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। এছাড়া Pan-Tilt-Zoom (PTZ) ক্যামেরা, যা ৩৬০° প্যান (ঘোরা), উল্লম্বভাবে টিল্ট (উঁচু-নিচু করা) এবং অপটিক্যাল জুম করার ক্ষমতা রাখে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে হুমায়ুন চত্বরে ২টি এবং আম্বরখানা, দরগা, ইসকন, মেন্দিবাগ, সুরমা, টিলাগড়, মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে ১টি করে মোট ৯টি ক্যামেরা কার্যকর রয়েছে।

এসব ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাই ছিল মূল লক্ষ্য। তবে চৌহাট্টার ঘটনাটি দেখে বোঝা যায়, ক্যামেরার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব রয়েছে।

জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, সুরমা মার্কেট, লামাবাজার, আম্বরখানা, মাজারগেট, জেলখানা পয়েন্ট, সুবিদবাজার, শাহী ঈদগাহসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত ক্যামেরাগুলো অপরাধ দমন, অপরাধী শনাক্তকরণ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নগরবাসী আশা করে, ক্যামেরাগুলোর যথাযথ ব্যবহারে কর্তৃপক্ষ আরও যত্নশীল হবেন।

এসএমপি’র উত্তরের ডিসি শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জুলাই বিপ্লবের উত্তাল দিনগুলোতে নগরীর বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে নগরীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সচল ৭৮টি ক্যামেরার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে এসএমপিকে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আরও ৩০টি নতুন ক্যামেরা স্থাপনের কাজ খুব শিগগিরই শুরু করবে বলেও জানান ডিসি শাহরিয়ার আলম।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *