ছয় আসনের তিনটিতেই বিএনপির বিরোধ

বাংলাদেশ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর ছয় আসনের তিনটিতেই বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে। ফলে এর সুবিধা নিতে পারে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই ছয়টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে। এ ছাড়া এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ছয়টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। দুটি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও একটি আসনে গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

নোয়াখালীর তিনটি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির ভেতরে রয়েছে ক্ষোভ। এসব আসনের প্রার্থী বদলের দাবিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চলছে বিক্ষোভ। বিপরীতে অনেক আগে থেকে দলীয় প্রার্থী নিয়ে সব আসনে প্রচারে নেমেছে জামায়াত।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নোয়াখালী-৫ ও ৬ আসন ছাড়া বাকি চারটি আসনেই দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিএনপির নেতারা দলকে সুসংগঠিত করলেও নির্বাচন ঘিরে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে।

বিএনপির দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর নোয়াখালী-২, নোয়াখালী-৫ ও নোয়াখালী-৬ আসনে মনোনয়ন বদলের দাবি জানিয়ে আসছেন বঞ্চিত নেতারা। এ দাবিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের অনুসারীরা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ আজাদ বলেন, বিএনপি যেহেতু দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, তাই দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। এসব প্রার্থীর মধ্যে দল যাকে যোগ্য মনে করেছে, তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। এই নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এসব কোন্দলের অবসান ঘটবে।

এদিকে ছয় আসনেই প্রচারণায় ব্যস্ত জামায়াতের নেতাকর্মীরা। দলটির প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি প্রতিটি আসনে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সব আসনে এবং এনসিপি তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়ে আলোচনায় এসেছে। নোয়াখালী-৪ আসনে গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থী দিয়েছে।

নোয়াখালীর ছয় আসনের ৯ উপজেলার ৮ পৌরসভা  এবং ৯১ ইউনিয়নে ভোটার ২৮ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৫ জন, নারী ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৯৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৬ জন।

নোয়াখালী-১

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব এ এম এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহিমকে ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। আসছে নির্বাচনেও তিনি বিএনপির দলীয় প্রার্থী। প্রার্থী ঘোষণার আগ পর্যন্ত এই আসনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করে আলোচনায় এলেও প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে তিনি হতাশ। উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মো. সাইফুল্লাহ এখানে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক এনসিপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন।

নোয়াখালী-২

এই আসনে বিএনপি প্রার্থী দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি এর আগেও পাঁচবার এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপি  প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পর এখানে বিএনপির বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। দলটির একাংশ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা নায়েবে আমির সাইয়েদ আহমদ। এ ছাড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও নির্বাহী পর্ষদের সম্পাদক সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খলিলুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন।

নোয়াখালী-৩

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলুকে। তিনি এর আগে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ বছরের শুরু থেকেই বুলু নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। এখানে জামায়াতের প্রার্থী দলটির জেলা সেক্রেটারি বোরহান উদ্দিন। তিনি দুবার বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নুর উদ্দিন আমানতপুরী।

নোয়াখালী-৪

এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। তিনি এ আসনে এর আগে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রার্থিতা ঘোষণার আগে থেকেই মো. শাহজাহান নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করে আসছেন। তবে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নোয়াখালীর সাবেক পৌর মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ প্রার্থীতার কথা জানিয়েছেন। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা আমির ইসহাক খন্দকার। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী আবদুজ জাহের ও ইসলামী আন্দোলনের ফিরোজ আলম।

নোয়াখালী-৫

নোয়াখালী-৫ আসন সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নির্বাচনী এলাকা। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও ঢাকার ব্যবসায়ী মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। তাঁকে প্রার্থী ঘোষণার পর প্রার্থী বদলের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-পল্লিবিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের অনুসারীরা। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন বেলায়েত হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু নাছের।

নোয়াখালী-৬

এ আসনে এবার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। এ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আজিম গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিমকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে হাতিয়ায় তাঁর অনুসারীরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন। হাতিয়ার তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, দলের প্রার্থী পরিবর্তন করে ফজলুল আজিমকে মনোনয়ন দিতে হবে। নতুবা এই আসনে ধানের শীষ প্রার্থীর ভরাডুবি হবে। এর আগে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জিতে আসা আলোচিত প্রার্থী ফজলুল আজিম এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেছেন। এই আসনে হাতিয়া বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর উদ্দিনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে আরও লড়বেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ, জামায়াতের  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শাহ মাহফুজুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নুরুল ইসলাম শরীফ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *