বিগত ৫ই আগস্টের আগে ছিলেন সিলেট জেলা যুবলীগ সভাপতি ভিপি শামীম আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সীমান্তিক শামীম আহমদ গ্রুপের সক্রিয় ক্যাডার।
সিলেটে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল তখন তিনি আন্দোলন প্রতিহত করতে সক্রিয় ছিলেন রাজপথে।
তাছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জ যখন স্বৈরাচারবিরোধী একদফা আন্দোলনে উত্তাল ছিল তখন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ও সলমানের ছোট ভাই রাহেল সিরাজের ডাকে সিলেট নগরী থেকে চলে যান তার এলাকা গোলাপগঞ্জে।
সেখানে গিয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে সংঘর্ষে সক্রিয় নেতৃত্ব প্রদান করেন যুবলীগ ক্যাডার সলমান। জুলাই আন্দোলনে গোলাপগঞ্জে শহিদ হন ৭ জন।
বিগত ৫ই আগস্টের কিছুদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন সলমান। তবে আস্তে আস্তে সাংবাদিক পরিচয়ে খোলস পাল্টে মাঠে নামেন তিনি।
এই কারণে সালমান আহমদ চৌধুরী এখনো প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। উল্টো জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর সিলেট ও গোলাপগঞ্জে সক্রিয় হামলাকারী এই যুবলীগ ক্যাডার সিলেট শহরে সাংবাদিক পরিচয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে।
বহুরুপি এই সলমান নিজের নেতাদের সম্পত্তিতে গিয়ে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত আছেন। বহুরূপি এই সলমান আহমদ চৌধুরী গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণবাঘা ও নগরীর পায়রা ৮৩, দরগাহ মহল্লা এলাকার ইকবাল আহমদ চৌধুরীর ছেলে। জানা যায়, সিলেট জেলা যুবলীগ সভাপতি ভিপি শামীম আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সীমান্তিক শামীম গ্রুপের সক্রিয় ক্যাডার সলমান আহমদ চৌধুরী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের উপর হামলায় সক্রিয়ভাবে মাঠে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
কিন্তু গত ৫ই আগস্ট পর বহৃরূপি সলমান বনে যায় ‘সাংবাদিক’। বিগত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল সলমান।
কিছুদিন অতিবাহিত হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকে ম্যানেজ করে নিজেকে ‘সাংবাদিক’ দাবি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকে সলমান চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়।
তার প্রথম টার্গেট হয় তারই নেতা জেলা যুবলেগের সাধারণ সম্পাদক সীমান্তিক শামীমের প্রতিষ্ঠান সীমান্তিক। সিলেট নগরীর ধোপাদিঘিরপারে অবস্থিত সীমান্তিকের নগর মাতৃসনদে সাংবাদিক পরিচয়ে ঢুকে তার একসময়ের সহকর্মী পারভেজ আলমকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি করে।
পারভেজ আলমের মেয়ে কীভাবে কানাডায় অবস্থান করে সীমান্তিক থেকে বেতন উত্তোলন করে সেটি জানতে চায়। পাশপাশি সলমান আরেক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যায় ভুক্তভোগি সাজিয়ে।
দাবি করে তার একটি ভিডিও সলমান আহমদ চৌধুরী নামক ফেসইবক আইডি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পারভেজ আলমের মেয়ের কোন তথ্য সেই ভিডিওতে প্রকাশ পায় নি।
সলমান পারভেজের কানাডা প্রবাসী মেয়ের বেতন উত্তোলনের কাহিনী ও পারভেজেরে বিভিন্ন নারী কেলেংকারির কথা ফেইসবুকে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি প্রদান করে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি।
পারভেজ আলম তার অনৈতিক কর্মকান্ড – ঢাকতে সলমন আহমদ চৌধুরীর সাথে হাত মেলান। গত বছরের ২৬শে সেপ্টেম্বর তারিখ পারভেজ আলম সীমান্তিকের একাউন্ট থেকে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
পরের দিন ২৭শে সেপ্টেম্বর নগরীর মিরাবাজারস্থ হোটেল মীরা গার্ডেনে সীমান্তিকের পারভেজ আলম, মোরশেদ আলম, রুহুল আমিন ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সলমান আহমদ চৌধুরী ও সীমান্তিকে চাকুরি করা তার এক বন্ধু গোপন বৈঠকে বসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা প্রদান করা হয় কথিত সাংবাদিক সলমান আহমদ চৌধুরীকে।
ধোরপাদিঘিরপার সীমান্তিকের মাতৃসনদ থেকে সলমানের চাঁদাবাজি শেষ হলে পারভেজের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে চাঁদাবাজ সলমান আহমদ চৌধুরীর।
তাছাড়া ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির পর সলমান একটি গাড়ি কিনেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তাছাড়া কথিত সাংবাদিক সলমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক নারীদের ব্লাকমেইল করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার অন্তরঙ্গ ৪২ মিনিটের একটি ভিডিও সুরমা টাইমসপ্রতিবেদকের নিকট জমা রয়েছে। তাছাড়া তার ফেইসবুক আইডি ঘুরে সীমান্তিকের নার্সদের নাচ ও গানের একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে।
যা অনুমতি ছাড়া ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হাসপাতালের নার্সরা জানান, আমাদের অনুমতি ব্যতিত গোপনে ভিডিও সংগ্রহ করে সলমান আহমদ চৌধুরী নামক আইডিতে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এতে আমরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিভিন্ন কটূক্তির স্বীকার হচ্ছি। তাকে ভিডিও ডিলিটের অনুরোধ করলে সে আমাদের তার সাথে দেখা করতে বলে।
দেখা না করলে ভিডিও ডিলেট দিবে না বলে জানায়। তখন সীমান্তিকের মাতৃসনদের কর্মকর্তা পারভেজ আলম, ড্রাইভার কামরুল ও অফিস সহসকারী সালিন আহমদ চাঁদাবাজ সলমান আহমদ চৌধুরীকে মাছিমপুরস্থ সীমান্তিক হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কো-অর্ডিনেটর জামাল আহমদের কাছে যেতে বলেন।
সলমানকে ওই প্রতিষ্ঠানের ল্যাবের ভেতরের একটি ভিডিও প্রদান করেন পারভেজ আলম। সেটি নিয়ে চাঁদাবাজ সলমান আহমদ চৌধুরীকে মাছিমপুরস্থ সীমান্তিক হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উপস্থিত হয়। সেখানে গিয়ে দাবি করে মোটা অংকের চাঁদা।
তবে তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন কা-অর্ডিনেটর জামাল আহমদ। তিনি চাঁদা না দিলে তার এবং তার স্ত্রী সিসিক কর্মকর্তা’র ও সন্তানদের বিরুদ্ধে ভিডিও বানিয়ে ফেইসবুকে ভাইরাল করার হুমকি প্রদান করে। পাশপাশি সীমান্তিকের ভেতরে ও বাইরের কয়টি ভিটিও ফুটেজ নিয়ে যায়।
তাছাড়া সীমান্তিকের ল্যাবের তালা খুলে পারভেজ আলম নিজে একটি ভিডিও করে সলমানের নিকট পাঠান।
তারপর সীমান্তিকের ল্যাবে মাদক সেবন হয় এমন একটি ভিডিও তৈরি করে নিজ আইডিতে প্রচার করে কথিত সাংবাদিক সলমান আহমদ চৌধুরী। পাশাপাশি ‘আজকের পাথা’ নামক কথিত অনলাইন পোর্টালে ভুয়া একটি সংবাদ প্রকাশ করে সেটি জামাল আহমদের নিকট পাঠান।
এরপরও সলমানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন (চাঁদা) না করায় জামাল আহমদের বিরুদ্ধে একের পর এক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে প্রচার করতে থাকে চাঁদাবাজ সলমান।
পাশপাশি জামাল আহমকে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে। এতে ভীত হয়ে সহজ সরল জামাল আহমদ সিলেটে কোতোয়ালি মডেল থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
কথিত সাংবাদিক সলমান আহমদ চৌধুরীকে চাঁদা দিয়েছেন বলে স্বীকার করে সীমান্তিক ধোপাদিঘিরপার মাতৃসনদ ক্লিনিকের প্রধান পারভেজ আলম বলেন, এগুলোর কোনও প্রমাণ থাকে।
আইনের আইনের আশ্রয় নেন নি কেন জানতে চাইলে পারভেজ বলেন আমি এই বিষয়ে মামলা করব না।
এ ব্যাপারে মাছিমপুরস্থ সীমান্তিক হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কো-অর্ডিনেটর জামাল আহমদ জানান, সলমান সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছিল।
আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমার ধারণা আমার ল্যাবের ভেতরে পারভেজ আলম স্টাফের কাছ থেকে চাবি নিয়ে বিনা অনুমতিতে ঢুকে তার মত করে সাজিয়ে ল্যাবের একটি ভিডিও করে সলমানের নিকট পাঠিয়েছেন।
তাছাড়া সলমান ও তার সিডিকেন্ট চক্র আমাকে ফাঁসাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এরজন্য আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।
এদিকে সম্প্রতি সিলেট নগরীর ঈদগাহে বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি চলকালীন মেলার আয়োজক শিল্পপতি আবদুল গাফফারের নিকট সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে এবং চাঁদা না দিলে ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল করে মেলা বন্ধের হুমকি প্রদান করে।
শিল্পপতি আবদুল গফফার চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সলমান তার ফেইসবুক আইডি থেকে মেলার একটি ভিডিও প্রকাশ করে।
যেখানে আবদুল গাফফারের আগের ও পিছনের কথাগুলো কেটে তথ্য বিকৃতি করে ভিডিও প্রকাশ করে সাইবার সন্ত্রাস ও যুবলীগ ক্যাডার সলমান আহমদ চৌধুরী।
ভিডিওতে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মেলার আয়োজক শিল্পপতি ও তাঁতীদল নেতা আবদুল গফফার তাকে হুমকি প্রদান করেছেন বলে সে অভিযোগ আনে।
এ ব্যাপারে শিল্পপতি আবদুল গফফার বলেন, সলমান আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের দোসর। সে আমার অনুমতি ছাড়া আমার কথোপকথন প্রকাশ করেছে।
যা বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৩ অনুযায়ী আইনত অপরাধ।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক জানান, সীমান্তিকের এক কর্মকর্তা সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন