জঙ্গিদল হিন্দাল শারক্বীয়ার পেছনে জামায়াত-শিবির: সিটিটিসি

সিলেট

কুমিল্লাসহ সারা দেশ থেকে হঠাৎ করে ৭০ থেকে ৮০ জন তরুণের বাড়ি ছাড়ার ঘটনায় তদন্তে সামনে আসা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি এও জানিয়েছে যে, এই হিন্দাল শারক্বীয়ার পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকিচিনেরও সম্পর্ক আছে। হিন্দালের জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করে তারা।

জামায়াত আমিরের ছেলে এই জঙ্গি সংগঠনের সিলেট অঞ্চলের প্রধান, এটি আগেই জানানো হয়েছে। তার বাবাকে গ্রেপ্তারের পর জানানো হয়েছে, ছেলের নেতৃত্বে যে ১১ জন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিতে হিযরতে গিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই শিবিরের সাবেক সাথী। এমনকি জামায়াত থেকেও সংগঠনটি সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে থাকে।

 

এও বলা হয়েছে, ছেলের সব কাজের বিষয়ে জানতেন জামায়াত প্রধান, আর্থিক সাহায্য ছাড়াও সব ধরনের সহযোগিতা করতেন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এ কথা জানান।

শফিকুরের ছেলে রাফাত চৌধুরীকে গত ৯ নভেম্বর সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আনসার আল ইসলাম, হিযবুত তাহরীরসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারির কারণে যারা কাজ করতে পারছিলেন না, তাদেরকে নিয়ে এই জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে তোলা হয় বলে জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

খেলাফত শাসন ব্যবস্থা কায়েক এই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। র‌্যাব ও সিটিটিসির বক্তব্য হলো, আগের জঙ্গি সংগঠনগুলোর তুলনায় তাদের অস্ত্র ও অর্থ বেশি। তারা বিশেষ করে তরুণদের সংগঠনে ভেড়াচ্ছে।

 

গত রাত একটার দিকে ঢাকা থেকে জামায়াত আমিরকে আটক করা হয়। পরে তার ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থাকায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলা করা হয়, তাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকেও। পরে আদালতে তোলে ১০ দিনের রিমান্ড পাওয়া হয়, বিচারক দিয়েছেন সাত দিন।

পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান প্রধান বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের নেতা ডা. রাফাত ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনিসহ কয়েকজন জঙ্গি সদস্যকে জঙ্গিবাদে জড়ানো, আর্থিক সহায়তা, ট্রেনিংয়ে পাঠানো, আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে রাফাতের বাবা জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি।’

জামায়াত-শিবির সম্পৃক্ততা কীভাবে

তিনি জানান, রাফাতকে এক সহযোগীসহ সিলেট থেকে আমরা গ্রেপ্তারের আগে পাহাড়ের শিবিরে প্রশিক্ষণ নিতে ক্যাম্পে যাওয়ার উদ্দেশে ‘হিযরত করা’ তিন জনকেও যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তারা রাফাতকে গ্রেপ্তার করেন।

তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে, রাফাত ছাড়াও তার সহযোগী আরিফও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দুজনই ছিলেন সাথী।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়ার আগে আনসার আল ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। তিনি সিলেট অঞ্চলে অনেক সদস্যকে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়ান।’

রাফাতের নেতৃত্বেই পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিনের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য ১১ জন হিযরত করে বলে জানতে পেরেছে সিটিটিসি।

এই ১১ জনের বেশিরভাগ শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান। বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের সরাসরি সম্পৃক্ততা বা সমর্থন ছিল কিনা তা জানতে এবং ডা. রাফাতের মামলায় সরাসরি সম্পৃক্ততায় ডা. শফিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

এই কুকি-চিন মানে ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ যেটি গত এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ফেসবুকে। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি আছে তাদের। এই সংগঠনের নাম সামনে আসার পর সরকার তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।

সিটিটিসি প্রধান জানান, সেই ১১ জন কুকি-চিনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। পরে রাফাতের সঙ্গী তাহিয়াদের নেতৃত্বে অন্যরা হিযরত করেন।

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে বলেও তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি। ইউনিট প্রধান বলেন, ‘সিলেট থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের যাদের গ্রেপ্তার করেছি বা নাম পেয়েছি, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে পেয়েছি, পূর্বে তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। দুটি সংগঠনের সঙ্গে পরস্পর বোঝাপড়া থাকতে পারে অথবা সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতাও করতে পারে।

‘শারক্বীয়ার অন্যান্য যেসব নেতাদের গ্রেপ্তার করেছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছি, জামায়াতের কাছ থেকে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।’

শফিকুর রহমান ছাড়া জামায়েতের আর কোনো নেতার সঙ্গে শারক্বীয়ার সম্পৃক্ততা আছে কি না- জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘যে সংগঠনের আমিরের ছেলে হিযরত করে, সেই সংগঠনের আঞ্চলিক নেতাদের সমর্থন আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

জামায়াত আমির শফিকুরের কী ভূমিকা

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা রাফাতের (জামায়াত আমিরের ছেলে) কাছে জানতে পারি, ২০২১ সালের জুন মাসে তিনি যখন বান্দারবান থেকে ফেরত আসেন, তখন তার পিতার সম্মতিতে বিশেষ ব্যবস্থাপনার দুটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে আসা হয়। ডা. শফিকের তত্ত্বাবধানে তাদের কয়েকজন ঢাকায় ও কয়েকজন সিলেটে ফেরত যায়।’

সিলেটে শফিকের বাসায় রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বলেও জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান। এ বিষয়েও জানতেন শফিক, ক্ষেত্রবিশেষে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন।

রাফাতসহ ১১ জন যখন হিযরত করে তখন শফিক পুরো খরচ বহন করেন।

পুলিশের তথ্য মতে, এই হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াতি শাখার প্রধান ছিলেন ডা. শাকের, তাদেরকেও কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, হিযরত করার সমস্ত খরচ শফিকুর রহমান তার ছেলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তারা যখন যেতে পারছিল না তখন বিশেষ ব্যবস্থায় ফেরত আনা হয়। ছেলেকে নিয়ে এসছিলেন ঢাকা এবং কয়েকজনকে নেয়া হয় সিলেটে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *