‘জনদুর্ভোগ নিয়ে সিলেট নগর কর্তৃপক্ষ উদাসীন’

সিলেট

একদিকে বাস্তবায়ন হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। অন্যদিকে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন ভোগান্তি। আর এই দুর্ভোগের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধি ও কর্তাব্যক্তিদের উদাসীনতাই দায়ী।  

সিলেট নগরীর দুর্ভোগ নিয়ে এমন মূল্যায়ন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর।

নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাথে কথা বলতে গিয়ে ফারুক মাহমুদ চৌধুরী তুলে ধরেন উন্নয়নের নামে নগরভবন কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া মনোভাবের ও নানা খামখেয়ালিপনার। ফারুক মাহমুদ বলেন, ‘উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ অর্ধেক করে ফেলে রাখা হয়েছে। একটি কাজ শেষ না করে আরেকটি শুরু করা হচ্ছে। অনিরাপদ অবস্থায় কাজ হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে।

রাস্তা ও ড্রেনের কাজ নিজেদের খেয়ালখুশিমতো করায় যানজট বেড়েই চলছে। বর্ষায় কাদাজল আর শীতে ধুলোবালির শহরে পরিণত হচ্ছে সিলেট। ধুলোবালির কারণে মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অল্প বৃষ্টিতে নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। কিন্তু এসব বিষয়ে নগরভবন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়ার সময় নেই। তারা বেপরোয়া। জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে যেন তাদের ভাববার সময় নেই। উন্নয়ন তো দুর্ভোগ কমানোর জন্য। কিন্তু তাদের কাজকর্মে মনে হয়, তারা জনদুর্ভোগের বিষয়টি আঁচই করতে পারছেন না।’

অরক্ষিত উন্নয়ন কাজের প্রসঙ্গ টেনে ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যস্ততম রাস্তা সম্প্রসারণ ও পাশের ড্রেনের কাজগুলো হচ্ছে সম্পূর্ণ অনিরাপদভাবে। পাড়া-মহল্লার রাস্তার কাজও চলছে একইভাবে। কোনো ধরণের নিরাপদবেষ্টনি ছাড়াই রাস্তার পাশের ড্রেনের কাজ করছে সিটি করপোরেশন। বছরখানেক আগে নগরীর ব্যস্ততম আম্বরখানা এলাকায় ড্রেনে পড়ে শরীরে লোহার রড ঢুকে মারা গেছেন আবদুল বাছিত মোহাম্মদ নামের একজন শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক। এনিয়ে নগরজুড়ে প্রতিবাদ উঠলেও কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙেনি। এখনো ড্রেন খোলা রেখে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এসব নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। কিন্তু মানুষের আর্তনাদ শোনার সময় নেই কর্তাব্যক্তিদের।’

জলাবদ্ধতা এখন সিলেট নগরবাসীর অভিশাপে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলেই নগরজুড়ে শুরু হয় আতঙ্ক। বাসার নিচতলায় বসবাসকারী লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র উপরে ওঠাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও কেন জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের ধারাবাহিক কার্যক্রম থাকা উচিত ছিল। নিয়মিত ছড়া-খাল ও ড্রেন সংস্কার ও পরিচ্ছন্ন করা উচিত ছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন সেটা করছে না। যখন জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে তখন তারা নড়েচড়ে বসছে। নাগরিকরা ছড়া-খালে ময়লা ফেলে দেওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে বলে অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। কিন্তু এসব কিছু দেখভাল করার জন্যইতো সিটি করপোরেশন। এর দায় মেয়র ও কাউন্সিলররা এড়াতে পারেন না। তারা প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে হবে। কেউ নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া ছড়া-খাল ও ড্রেনে ময়লা ফেলে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে তাদেরকে জরিমানা করতে হবে। এতে সচেতনতা বাড়বে।’

তবে নাগরিক দুর্ভোগ নিরসন ও পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য সবার আগে নগরভবনে নগর পরিকল্পনাবীদ নিয়োগের প্রয়োজন বলে মনে করেন ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নগরভবনে একজনও নগরপরিকল্পনাবীদ নেই, এটা খুবই দু:খজনক। পরিকল্পিত নগরায়ন ছাড়া কাঙ্খিত নগরী গড়া সম্ভব নয়। এজন্য নগর পরিকল্পনাবীদদের একটি টিম থাকা উচিত। তা না হলে উন্নয়নের নামে টাকা খরচ হবে, কিন্তু ভোগান্তি কমবে না, উন্নয়নের সুফলও মিলবে না।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *