জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও দৌড়ের মধ্যদিয়ে মুক্ত দিবস পালন করলেন স্কোয়াড্রন লীডার সদরুল

মৌলভীবাজার

মুহাম্মদ আমির উদ্দিন কাশেম, জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার:-

আজ সোমবার (৬ ডিসেম্বর) কুলাউড়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ) ও সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট -এট-আর্মস বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মোঃ সদরুল আহমেদ খাঁনের তত্বাবধানে ও আব্দুল লতিফ খাঁন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সকালে কুলাউড়ার সকল ইউনিয়নে রানারদের মাধ্যমে একযোগে পতাকা উত্তোলন করা হয়,
এছাড়াও শরীফপুর ইউনিয়নে তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে সকাল ৯ টায় বিজয় র‍্যালীর দৌড় শুরু করে উপজেলার সকল ইউনিয়ন প্রদক্ষিন করেন এবং সকল রানাররা নিজ নিজ ইউনিয়নে তার সাথে দৌড়ে অংশ নেয়, এবং তিনি “সমৃদ্দির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামের একটি লিফলেট ও ফাউন্ডেশনের সদস্য ও রানারদের মাঝে টিশার্ট বিতরণ করেন।

উল্লেখ্য যে ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রু মুক্ত হয় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা। পাকাস্তানী সামরিক জান্তাদের কুলাউড়া থানায় প্রথম আগমন ঘটে ৭ মে। মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া প্রবেশ পথে কাপুয়া ব্রিজের কাছে গতিরোধ করতে গিয়ে সেদিন শহীদ হন বীর সৈনিক মোজাহিদ সদস্য জয়চন্ডী ইউনিয়নের মো. আকরাম ওরফে আছকির মিয়া ও হাবীব উদ্দিন। পাক সেনা ও দু’দলের মধ্যে গুলি বিনিময় চলতে থাকে, এক পর্যায়ে তারা দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীন হন। এই দুই জনই বীর সন্তান হলেন কুলাউড়া থানা এলাকার স্বাধীনতা মেদীমুলের প্রথম শহীদ।

দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানী ও তাদের দোসরদের অমানবিক হত্যা, জুলুম, রাহাজানি, নির্যাতন সহ্য করে বাঙ্গালিরা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ফিরে পায়। পাকিস্তানী শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙ্গালি বিদ্রোহীদের দীপ্ত শিখায় সেদিন জ্বলে উঠেছিল। সারাদেশের মতো কুলাউড়ায়, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র-যুবক, শ্রমিকসহ সবাই সাহসী ভূমিকা নিয়েছিল। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর পূর্ব পাকিস্তানের চেহারা পাল্টে যায়।

কুলাউড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় ও সর্বশেষ অপারেশন হয় গাজীপুর চা বাগানে। নভেম্বরের শেষ দিকে গাজীপুর মুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এম এ মোমিত আসুক। সাগরনাল চা বাগানে প্রথম এসে অবস্থান নেন তারা। ঐ স্থানে মিলিত হন ধর্মনগর থেকে আগত কর্নেল হর দয়াল সিংহের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৬৭ রাজপুর রেজিমেন্টের বিরাট একটি দল। তারাও বাগানে অবস্থান নেন। ৩০ নভেম্বর কাকুরা চা বাগানে অবস্থানকারী ৭৫ রাজাকার ও পাঁচজন পাকিস্তানি সৈন্য ধরা পড়ে।

১ ডিসেম্বর কাকুরা চা বাগান থেকে গাজীপুর চা বাগান এলাকার দিকে মিত্র বাহিনীরা অগ্রসর হলে পাক সেনাদের সাথে পাল্টা গুলি বর্ষণ চলতে থাকে। ২ ডিসেম্বর রাত যুদ্ধ হয়। ৩ ডিসেম্বর ৪/৫ গোর্খা রেজিমেন্ট কর্নেল হারকিলের নেতৃত্বে একটি দল সাহায্যে এগিয়ে আসে। পেছনে ৯৯ মাইল্টেল ব্রিগেডের আর্টিলারী সহায়তায় রাতেও প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। তবুও গাজীপুর চা বাগান এলাকা দখলমুক্ত সম্ভব না হওয়াতে ৪ ডিসেম্বর যুদ্ধের পরিকল্পনা বদলে ফেলা হয়।

পিছন দিক থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেন, হারকিল। সে অনুযায়ী এম এ মোমিত আসুক ও মোহন লাল সোম পিছনে আসার দায়িত্ব গ্রহণ করে রাত ১২টায় সম্মিলিত বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেষ দিকে লস্করপুর গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী এ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উক্ত যুদ্ধে প্রায় ২৫০ জন পাক সৈন্য প্রাণ হারায়। জীবিতরা সবাই পলায়নের চেষ্টা। ৫ ডিসেম্বর গাজীপুর চা বাগান এলাকা মুক্ত হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *