জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন দিন : জামায়াতের আমীর

জাতীয়

জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, একটা নির্বাচন কমিশন হয়েছে। তাঁরা বলেছেন তাঁরা নাকি ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দেবেন। আমরা তাঁদের একটি অ্যাসিড টেস্ট দেখতে চাই। জনগণ এখন সাফার করছে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিধি না থাকার কারণে। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দিন। আমরা দেখি আপনাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা কতটুকু। এটার প্রমাণ আপনারা পেশ করুন।

শুক্রবার ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউস ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন জামায়াতের আমীর। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় কর্মী সভার কার্যক্রম। জেলা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন। জামায়াতের আমীর মঞ্চে আসেন বেলা পৌনে ১১টায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জামায়াত আমীর বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যদি জনগণ সন্তুষ্ট হয়, তাহলে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। এখানে যদি কোনো কিছু ধরা পড়ে তাহলে নির্বাচন কমিশনকে হলুদ নয়, লাল কার্ড দেখাবে।

প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন জামায়াতের আমীর। তিনি সংসদে সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোট নিশ্চিতের আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে ডা: শফিক আরও বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, সংসদ দুই কক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ। মূল কর্তৃত্ব থাকবে নিম্নকক্ষের হাতে। সেটার নির্বাচন হবে বর্তমান পদ্ধতিতে, আর উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পিআর সিস্টেমে। উচ্চকক্ষ যদি পিআর সিস্টেমে হয়, তাহলে নিম্নকক্ষ নয় কেন? একই দেশে দুই পদ্ধতির প্রয়োজনটা কী। দুনিয়ার ৬২টি দেশ পিআর সিস্টেমে নির্বাচন করে। তাঁরা যদি সুফল যুগ যুগ ধরে ভোগ করে তাহলে এই সুফল থেকে জাতিকে বঞ্চিত করার আমরা কে? সুতরাং এই অধিকার জাতির হাতে তুলে দিতে হবে। যাঁরা মানবেন না তাঁরা হলো, বিচার মানি তালগাছটা আমার। আমরা বলব বিচার মানুন, রায়ে তালগাছ যাঁর তাঁর হাতে যাবে।

কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার কোনো ধরনের সুপারিশ মানা হবে না উল্লেখ করে ডা: শফিক বলেন, আমরা ১৮ কোটি মানুষকে সুবিধা দেওয়ার যত সুপারিশ আছে তা-ই মানব। আপনাদের সবার কাছে আমাদের অনুরোধ, সবাই নিজেকে গড়ুন। ঘরে ঘরে ন্যায় ও সত্যের আওয়াজ পৌঁছে দিন। জনগণকে অসত্য ও অপরাধের বিরুদ্ধে সংগঠিত করুন। হয়তো বা অপরাধীদের দমন করার জন্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার জন্য আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামতে হতে পারে, তার জন্য তৈরি হোন।

বক্তব্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গও টানেন জামায়াতের আমীর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম কথা হচ্ছে যে কয়জন এই সুপারিশমালা তৈরি করেছেন, তাঁরা এই দেশের সাড়ে ৯ কোটি মায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাঁরা সমাজকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চান, সে কথা বলতেও আমার লজ্জা করে। আমরা সেই জায়গায় তাঁদেরকে নিতে দেব না ইনশাআল্লাহ। এ দেশের মানুষের একটি সংস্কৃতি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আঘাত দিলে সমাজের পুরো শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যাবে, এটা আমরা মানব না। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করব, আপনি দেশে ফিরে বিলম্ব না করে আগে এই কাজটি বাতিল করেন। তিনি আরও বলেন, আর যদি এমন কোনো কমিশন করতে হয়, তাহলে সব শ্রেণি-পেশা, দল এবং আদর্শের মানুষকে নিতে হবে। সেখানে ঈমানদার মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে, যাঁরা কোরআন হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন। তারপর দেখা যাবে কী আসে, তারপর আমরা বিবেচনা করব, তার আগে নয়।

ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমীর কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ছামিউল হক ফারুকী, জেলা জামায়াতের আমীর মো. আবদুল করিম, নায়েবে আমীর কামরুল হাসান প্রমুখ। কর্মী সম্মেলন সঞ্চালনা করেন মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শহীদুল্লাহ্ কায়সার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *