সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের মুজিবনগর চেয়ারম্যান টিলার উপরে মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলী মহিলাকে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও মূলহোতা জব্বার মিয়া সহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ।
গত (১২ই ডিসেম্বর) রবিবার সকাল ৭টায় অজ্ঞাত নামা এক মহিলার মৃতদেহ বিবস্ত্র অবস্থায় স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশকে অবহিত করে। পরে গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহিরুল ইসলাম খান, এসআই এমরুল কবির, এএসআই মশিউর রহমান, নারী কনস্টেবল চাঁদনি বেগমসহ অন্যান্য ফোর্সগন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উর্দ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল ইসলাম এবং ইন্সপেক্টর তদন্ত উমর ফারুক মোড়ল ঘটনাস্থলে গিয়ে অজ্ঞাতনাম ঐ মহিলার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। যেহেতু অজ্ঞাত নামা ঐ মহিলাকে এলাকার সবাই পাগল বলে জানত তাই এর নাম ঠিকানা সনাক্ত করতে তাৎক্ষণিকভাবে সিআইডি এবং পিবিআই সিলেটকে জানানো হয়।
ঘটনাস্থলে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ ও এডিশনাল এসপি (ক্রাইম) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরে সিআইডি এবং পিবিআই ফরেনসিক টিম অজ্ঞাত নামা ঐ মহিলা নাম ঠিকানা সনাক্ত করনের লক্ষ্যে মৃতদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহসহ ঘটনার আলামত সংগ্রহ করে। ঐ ঘটনায় থানার এসআই জহিরুল ইসলাম খান বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যাহার নং-১৩/২২। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এমরুল কবির এই নৃশংস হত্যার রহস্য উদঘাটনে তথ্য প্রযোক্তি ব্যবহার করে সিলেটের পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন’র দিক নির্দেশনায় এবং থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর তদন্ত উমর ফারুক মোড়ল’র স্বার্বিক সহযোগীতায় ক্লু-লেস এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা মুজিবনগর গ্রামের আব্দুল জলিল মিয়া’র পুত্র মোঃ জব্বার মিয়া (৩৫), নলজুরি পশ্চিম পাড়া গ্রামের সেনু মিয়ার পুত্র ইউসুফ আলী (৩৫)কে ঘটনার দুদিনপর আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
তাদের তথ্যমতে মুজিবনগর গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া (২৫), বুধিগাঁও হাওর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ছেলে সেবুল মিয়া (২৭)কে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি এবং ঘটনার সাথে ব্যবহৃত অজ্ঞাতনামা মহিলার পরনে থাকা কাপড়, কম্বলের পূড়া অংশ, ও হত্যাকান্ডে ব্যহৃত পাথরের টুকরা উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে প্রাপ্ত অপরাধী বাচ্চু মিয়া নিজে এবং তার সহযোগী জব্বার মিয়া, সেবুল মিয়া তিনজনে মিলে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে মর্মে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ দ্বারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এমরুল কবির, গতকাল (১৯ডিসেম্বর) সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় সেবুল মিয়াকে জব্বার মিয়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল ইসলাম’র অফিসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ জানান, অজ্ঞাতনামা মানসিক ভারসাম্যহীন ভিকটিম দীর্ঘ ৫/৭বছর থেকে জাফলং পুলিশ ফাড়ি সংলগ্ন বাজারে কাশের পাগলার ভাঙ্গাড়ী দোকানের সামনে বা পাশ্ববর্তী আশরাফের বাড়ীর আঙ্গিনায় পরিত্যক্ত ঘরে রাত্রিযাপন করতো।
কিন্তু জব্বার মিয়ার বাবা পেশায় একজন নাইট গার্ড এবং মা প্রবাসে থাকার সুবাদে ফাঁকা বাড়ি পেয়ে তার সহযোগীদের নিয়ে ইয়াবা সেবন করাকালীন সময়ে অজ্ঞাত নামা পাগলিকে কৌশলে তার বাড়িতে এনে আমোদ ফুর্তি করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একপর্যায়ে তাদের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে অজ্ঞাত ঐ মহিলার পরনে থাকা কাপড় খোলে উলঙ্গ অবস্থায় পাশ্ববর্তী জঙ্গলে( চেয়ারম্যান টিলায়) ফেলে দেয়। পরদিন সকালে পথচারীরা বিবস্ত্র অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দেয়।
শেয়ার করুন