সিলেটের সাদা পাথর লুটকাণ্ডে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদের নির্দেশনা ছিল বালু-পাথরের অবৈধ উত্তোলন ঠেকাতে টাস্কফোর্সের অভিযানে নৌযান ডুবিয়ে ধ্বংস করা। এ নির্দেশনায় বর্ষা আসার পর থেকে সনাতন পদ্ধতি বালু-পাথর আহরণের প্রতীক বারকি নাওসহ শতাধিক নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এবার নতুন ডিসির দায়িত্ব গ্রহণের দিন বিদায়ী ডিসির নির্দেশনা বাস্তবায়নে টাস্কফোর্সের অভিযানে বারকিসহ ২০টি নৌকা ডুবিয়ে তিনজন শ্রমিককে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলংয়ে এ অভিযান হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফরহাদ উদ্দিন অভির নেতৃত্বে পিয়াইন নদের জাফলং ব্রিজ, চা-বাগান, জুমপাড় ও বল্লাঘাট এলাকায় চলা নৌযানগুলো জব্দ করে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, টাস্কফোর্সের অভিযানে বালু ও পাথর বোঝাই ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডির ৮টি নৌকা ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়। এরপর ইঞ্জিনচালিত কাঠের দুটো নৌকাসহ ১০টি হাতে বাওয়া বারকি নাও ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তিনজন শ্রমিককে আটক করে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জড়িত থাকার অভিযোগে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযানে গোয়াইনঘাট থানার এসআই ওবায়দুল্লাহ ও সংগ্রাম বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা অংশ নেন।
অভিযান চলাকালে বারকিশ্রমিকেরা তাদের হস্তচালিত নাও ডুবিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করায় পিয়াইনতীরে বসে সন্ধ্যার পর অভিযান শেষেও আহজারি করছিলেন। তাদের কয়েকজন জানান, অভিযানসংশ্লিষ্টদের নিকট বারকি নাও না ডুবানোর আকুতি করেও তারা রক্ষা করতে পারেননি। ডুবিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নাও রাতে উদ্ধার করতে জাফলংয়ে বাসিন্দা একজন বারকিশ্রমিক বলেন, ‘হুনছি নাও ডুবানোর ফরমানটা আগের ডিসি সাবের আছিল। নয়া ডিসি সাবের আমলেও কিতা আগের ফরমান উঠত নানি?’
এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য না করে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, টাস্কফোর্স বিধি অনুযায়ী অভিযান হয়েছে। তিনি বলেন, টাস্কফোর্সের এই অভিযানের পাশাপাশি জাফলং জিরো পয়েন্টের চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারও করা হয়েছে। এক হাজার ৫০০ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে জিরো পয়েন্টে ফেলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ঘনফুট পাথর জিরো পয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের বালু-পাথর মহালের জলপথে হাতে বাওয়া ‘বারকি নাও’ একটি ঐতিহ্যবাহী নৌযান। গরিব শ্রমজীবীদের রুটি রুজির বাহন এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা নিয়ে পরিবেশবাদী ও শ্রমিক সংগঠনও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সাদা পাথর লুটপাটের প্রতিবাদে সিলেটে ১৪ আগস্ট ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’ আয়োজিত সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন থেকে ‘বারকি চলুক, শ্রমিক বাঁচুক’ ফেস্টুন প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়া, ১৬ আগস্ট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশ থেকেও বারকি নাও না ডুবানোর আহবান জানানো হয়। এসব প্রতিবাদ-আহবান সত্ত্বেও অভিযানের কৌশল বদল হয়নি।
প্রধান সম্পাদকঃ সারওয়ার খান
সম্পাদকঃ জাকের খান (রুবেল)
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫