জুলাই অভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গুত্ব, শহীদ পরিবারের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে আমীরে জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের জাতীয় সম্পদ হিসেবেই মূল্যায়ন করে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী শহীদের নিয়ে অন্যদের মতো করে না এবং করবে না। শহীদের নিয়ে যারা রাজনীতি করে করুক। জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও জীবন্ত শহীদ পরিবারের সদস্য।
সোমবার (০৩ মার্চ) আহত, পঙ্গু, শহীদ পরিবারের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি শহীদ পরিবারের বেদনা তুলে ধরে বলেন, যেই মা-বাবা সন্তা হারিয়েছে, যে বোন স্বামী হারিয়েছে, যেই সন্তান পিতা-মাতা হারিয়েছে তারা গত বছর রমজানে একত্রে সেহরি ও ইফতার করেছে। এ বছর সেই স্মৃতি মনে করে সেহরি ও ইফতার তৃপ্তিতে করতে পারে না। এই বেদনা সহ্য করার নয়। এসময় তিনি এবারের ঈদ শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের সাথে পালনের ঘোষণা দেন। আমীরে জামায়াত বলেন, শহীদের নিয়ে প্রকাশিত শহীদ স্মরণিকা ঈদের পরপরই প্রত্যেক শহীদ পরিবারে পৌঁছানো হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে রাজধানীর লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদেরকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কারো ভাবনা চোখে পড়েনি। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী আমীরে জামায়াতের নির্দেশে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে এবং আহতদের খুঁজে-খুঁজে চিকিৎসা ও পুনবার্সনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর সাক্ষী উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারী ভাই-বোন। তিনি আরো বলেন, আমীরে জামায়াত বলেছেন, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ সহ আমাদের সকল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। ২০২৪ এর ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। এজন্য শহীদদের স্মরণে ১০ খন্ডে ২৫০০ পৃষ্ঠার মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এই বইতে শহীদদের পরিচয়, গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা ও শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং স্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস মুছে যেতে দিবে না জামায়াতে ইসলামী। তিনি উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন বাংলাদেশ আপনাদের। আপনারাই গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে হবে। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বুয়েটের অধ্যাপক প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম, সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুজাহিদের ছেলে আলী আহম্মদ তহকীক প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গিয়ে আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে গাজী এবং গণহত্যার শিকার সকলে শহীদ। তিনি বলেন, আমাদের শহীদেরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার যেই স্বপ্ন দেখেছে, সেই স্বপ্নের বীজ জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠাকালেই বুনেছে। জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘকাল ধরে সেই আন্দোলনই করে আসছে। জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন সঠিক ছিল এদেশের ছাত্র-জনতা ২০২৪-এ বুঝতে পেরেছে। এজন্য তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে ভালোবেসে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে। শহীদদের স্বপ্ন পূরণে জামায়াতে ইসলামী আগামীতেও কাজ করবে। তিনি উপস্থিত সকলকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ কামাল হোসাইন ও মো. শামসুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য এডভোকেট এস. এম কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোবারক হোসাইন, কামরুল আহসান হাসান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অণ্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম, শহীদ আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর সুযোগ্য পুত্র শামীম সাঈদী, শহীদ কাদের মোল্লার সুযোগ্য পুত্র জামিল হাসান সহ মহানগরীর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারী ১ হাজারের অধিক ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।
সভা শেষে গণহত্যার শিকার পরিবারকে হত্যাকারীদের বিচার দেখার সুযোগ দান এবং বাংলাদেশের জন্য আগামীতে ন্যায়পরায়ণ শাসক কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন আমীরে জামায়াত। এ সময় উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীরা আমীন কন্ঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শেয়ার করুন