নাশকতার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্ট জামিন দিলেও রোববার (৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে। ওইদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে জামিনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এ আদেশ দেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এরপর তাদের জামিন ঠেকাতে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় প্রায় এক মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন ফখরুল ও আব্বাস। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) আদেশের পর মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের আইনজীবীরা বলেন, নতুন কোনো মামলা না থাকলে শিগগির দুজন কারামুক্ত হবেন।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় পল্টন থানায় করা মামলায় ফখরুল ও আব্বাসসহ দলটির চারশজনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ৮ ডিসেম্বর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে নয়াপল্টনের সংঘর্ষের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন ৯ ডিসেম্বর আদালত তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ফের জামিনের আবেদন করলে গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার একটি আদালত জামিন না- মঞ্জুরের আদেশ দেন। এরপর ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুজনের জামিনের আবেদন না- মঞ্জুরের আদেশ দেন। সবশেষ ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে দুজনের জামিনের আবেদন নাকচ হয়।
গত সোমবার হাইকোর্টে তাদের পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।শুনানিকালে অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপিপন্থী অর্ধশতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম গোলাম মোস্তফা।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, মামলার এজাহারে দুজনের নাম নেই। ঘটনায় তারা উসকানি দিয়েছেন এমন প্রসঙ্গ এফআইআরে (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) নেই। তাদের নির্দেশনা ও প্ররোচনায় কেউ কিছু করেছেন এমন কিছু লেখা নেই। অথচ নিম্ন আদালত এজাহারে থাকা ২ ও ১০ নম্বর আসামিকে জামিন দিলেও এ দুজনকে দেয়নি। এখন জুডিশিয়ারি যদি এভাবে চলে তাহলে আপনাদের (হাইকোর্ট) হস্তক্ষেপ ছাড়া উপায় নেই।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এস এম মুনীর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, এফআইআরে নাম না থাকলে কাউকে আসামি করা যাবে না এমন কোনো বিধান আইনে নেই। সংঘর্ষের পর অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এফআইআরের পর তদন্ত শুরু হলে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতা হিসেবে দুজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় জামিন দেওয়া সমীচীন হবে না।
আদেশ শেষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, এই মুহূর্তে দুজনের নামে নতুন কোনো মামলা নেই। আশাকরি শিগগির তারা কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।
শেয়ার করুন