যাযাবরখ্যাত লেখক বিনয় মুখোপাধ্যায়ের সামনে তখন হাই-টেক সব আবিষ্কার। বড় বড় গাড়ি, মোটরকার, যা তাকে বিস্মিত করেছে। তখন সে তার ‘দৃষ্টিপাত’ বইয়ে লিখেছিলেন, ‘আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাতে আছে গতির আনন্দ, নেই যতির আয়েশ।’ তবে বিজ্ঞানের আবিষ্কার সাইকেল রয়েছে সম্পূর্ণ তার বিপরীতে। যদিও সাইকেল বিজ্ঞানের হাই-টেক আবিষ্কার নয়। তারপরও এই আবিষ্কার মানুষকে বেগ দিয়েছে কিন্তু আবেগ কেড়ে নেয়নি। দুই চাকার এই সাইকেলে গতির আনন্দ ও যতির আয়েশ দুটোই রয়েছে।
এদিকে আইনস্টাইনের কাছে জীবনটা সাইকেলের মতোই। বেগ ও আবেগ দুটোতেই গতি থাকতে হবে। নয়তো জীবনে হোঁচট খেতে হবে–এমনটাই বলেছিলেন তিনি। এ-তো গেল বিজ্ঞানের কথা। স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দিক থেকে সাইকেল আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা, শব্দ, বায়ু ও পরিবেশদূষণ রোধসহ অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সাইকেল মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের প্রতীক, যা সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা বাড়ানো, সামাজিক বন্ধন এবং সংস্কৃতির বাহন হিসেবে কাজ করে। জাতিসংঘ সাইকেলকে শান্তি, সহনশীলতা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য উপযুক্ত যানবাহন হিসেবে পরিচয় করিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বাইসাইকেল, বিশেষ করে উন্নত দেশের মানুষ সাইকেলের দিকে ঝুঁকছে বেশি।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সাইকেল চালান, তাদের কাছে সাইকেল চালানো মেডিটেশনের মতো কাজ করে। বাড়ে মনঃসংযোগ। শরীরর্চচার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম সাইকেল। এতে সময়ও বাঁচে।
জ্যামের শহর ঢাকায় একটু স্বস্তি নেয়ার সুযোগ নেই। গাড়িতে হলে আপনাকে দীর্ঘসময় জ্যামে বসে থাকতে হবে। প্রচণ্ড গরম ও ঘামে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সাইকেল চালিয়ে যদি আপনি অফিসে যান, তাহলে আপনাকে দীর্ঘসময় জ্যামে বসে থাকতে হবে না। আপনি আস্তেধীরে গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন। একই সঙ্গে হয়ে যাবে ব্যায়াম, যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন এক ঘণ্টা সাইকেল চালালে প্রায় ৫০০ ক্যালরি ওজন কমে, যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
সাইকেল চালানোর সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় বিধায় শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়া দ্রুত চলে। ফলে ফুসফুস ভালো থাকে। ওবেসিটি, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে হার্টকে ভালো রাখে।
স্বল্পমূল্যে পরিবহন সুবিধার পাশাপাশি আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে সাইকেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পৃথিবীব্যাপী জিম ও ব্যায়ামের অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে সাইকেল।
গত বছর বাংলাদেশ গেমসে সোনা জিতে আর সাইক্লিংয়ে বিশ্বরেকর্ড করে সবার নজর কেড়েছিলেন চট্টগ্রাম (জেলা) ক্রীড়া সংস্থার হয়ে দুই চাকায় ঝড় তোলা এই রাকিবুল।
টিমবিডিসি নামের বাংলাদেশের এমেচার সাইক্লিং টিমের চার সদস্যও সে বছর ১০ ডিসেম্বর বিজয়ের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে ৪৮ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন করেছিল।
সর্বোপরি আমাদের জীবনের সার্কেলে সাইকেল অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বস্তু। তাই বিশ্ব সাইকেল দিবসে আমাদের সবার উচিত সাইকেলের গুরুত্ব জনমানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া ও এর ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য সবাইকে সচেতন করা।