মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ফুলতলা বাজার পশুর হাটের খাস কালেকশনের নামে হরিলুটের অভিযোগ ওঠেছে। এমন অভিযোগ খোদ খাস কালেকশনের দায়িত্বে থাকা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠেছে, রশিদ জালিয়াতির মাধ্যমে কালেকশনের নামে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু টোল সরকারি কোষাগারে নামমাত্র জমা হচ্ছে এবং সিংহভাগই চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও স্থানীয় প্রশাসনের পকেটে।
অভিযোগ রয়েছে, খাস কালেকশনের জন্য উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতি অনুসরণ করেনি উপজেলা প্রশাসন। নিজেদের ইচ্ছেমতো সিন্ডিকেট গড়ে টাকা তুলছেন প্রশাসনের লোকজন।
এ সংক্রান্তে তথ্য চাইলেও সুস্পষ্ট তথ্য দিতে নারাজ জুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রতন কুমার অধিকারী।
গত মঙ্গলবার ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় ফুলতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রতন কুমার অধিকারী ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) বিদ্যাধন সিংহের নিকট থেকে খাসকালেকশনের হিসেবে নিকেশ বুঝে নিচ্ছেন।
প্রতি হাটবারে কি পরিমাণ রাজস্ব আদায় হচ্ছে, কিভাবে কোষাগারে জমা করা হয়, গত বাংলা সনে এই হাট বাজারের ইজারা মূল্য কত ছিল এবং টোল আদায়ের অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তার কাছে কোনো তথ্য নেই। এছাড়া এ সংক্রান্ত তথ্য কোনভাবেই দেওয়া যাবে না।’
স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৪২৯ বাংলা সনে ফুলতলা পশুর হাটটি প্রায় অর্ধকোটি টাকায় ইজারা গিয়েছিল। তবে রহস্যজনক কারণে এবার ১৪৩০ বাংলা সনে ইজারায় কেউ আগ্রহ দেখায়নি। ফলে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায় চলছে। অভিযোগ রয়েছে, খাস কালেকশনের জন্য উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতিও অনুসরণ করেনি উপজেলা প্রশাসন। প্রতি শনিবার এই বাজারে পশুর হাট বসে। এছাড়া প্রতি মঙ্গলবার কাঁচাবাজারও বসে। বিগত পহেলা বৈশাখ থেকে উপজেলা ভূমি অফিসের তত্ত্বাবধানে ফুলতলা বাজার পশুর হাটের টোল (খাস কালেকশন) আদায় করা হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, ফুলতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার বিদ্যাধন সিংহ, অফিস সহায়ক সমর কান্তি দে ও হুরমান আলীর অসাধু সিন্ডিকেট খাস কালেকশনে (টোল) আদায় করা টাকার নয়-ছয় করছেন। তারা রশিদ জালিয়াতির মাধ্যমে টোলের অর্ধেক টাকাই পকেটস্থ করছে। ফুলতলা বাজারের পশুর হাটে প্রতি হাটবারে একেকটি গরু সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি হাটবারে দেড়-দুই লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও তারা (ভূমি অফিসের কর্মচারী) নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বাকিটা অসাধু সিন্ডিকেটের লোকজনদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, সরকারি রাজস্ব লুটের মুল কারিগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) সমর কান্তি দে। সমর হাটের একটি ঘরের টেবিলে বসে দুই সহযোগী নিয়ে টোল আদায় করেন। তার টেবিল থাকে স্থানীয় দালাল বেষ্টিত। তাদের (দালাল) মাধ্যমে পশু ক্রেতার সাথে গোপন লেনদেন সম্পন্ন হলেই তিনি (অফিস সহায়ক সমর) কম মূল্য দেখিয়ে রশিদ (ক্রেতাদের) হস্তান্তর করেন। এছাড়া স্কেন করা রশিদ ক্রেতাদের ধরিয়ে সরকারী রাজস্ব পকেটস্থ করার অভিযোগ রয়েছে। এতে সরকার ব্যাপক পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
শেয়ার করুন