জৈন্তাপুরে এনআইডি নিবন্ধন ও সংশোধনে অনিয়ম ও ভোগান্তি চরমে

সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জৈন্তাপুর উপজেলায় নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন ও সংশোধন নিয়ে নানা অনিয়ম ও ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সার্ভার স্টেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।ভুক্তভোগী বিক্ষুব্ধ জনগণ উপজেলা নির্বাচন অফিসের এমন দুর্বৃত্তপণার বিরুদ্ধে ক্রমেই ফুঁসে উঠছে।ভূতুরে অবস্থা বিরাজ করছে ঐ সার্ভার স্টেশনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ উপজেলার সর্বত্র সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলা ০৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই উপজেলা জাতীয় সংসদের ২৩২, সিলেট-৪ আসনের একটি উপজেলা। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে এই উপজেলার মানুষ নানা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ব্যাংক, বীমা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, জায়গা-জমি, জন্ম নিবন্ধন সনদ, সরকারি-বেসরকারি চাকরি, বিবাহজনিত কারণে স্থানান্তর সহ সর্বাধিক কাজে জাতীয় পরিচয় পত্রের বহুল ব্যবহার হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ এই কার্ড ছাড়া কোনো কাজ করার উপায় নেই। যার কারণে জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুলত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধনের প্রয়োজন হয়।

এই সংশোধন ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এনিয়ে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন হতে আসা সেবা প্রত্যাশীরা পড়েন নানামুখি ভোগান্তির মধ্যে। সম্প্রতি মানুষ জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। সেজন্য পার্সপোর্ট সহ নানান কাজে সঠিক জাতীয় পত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু নির্বাচন অফিসে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকার কারণে কাজ যেমনটা বিলম্ব হচ্ছে টিক তেমনি অফিসে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারিরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তির উপর রেখে চলছেন।

সম্প্রতি বিগত তিন মাস হতে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা ভোগান্তির স্বীকার হননি এমন ১০ জন লোক খোঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য হবে। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। তবে এখানে বিকল্প হিসাবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে লাগে চাহিদা মোতাবেক টাকা। টাকা ছাড়া কাজ করতে গেলে ঘুরতে হবে এবং ঘুরতে হচ্ছে। কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে এক কর্মচারীর কাছে চাহিত টাকা জমা দিলেই সময়ের আগেই কাজ অধিকতর গুরুত্বের সাথে নিষ্পতি করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শনে এমন তথ্যই বেরিয়ে আসে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে।

টাকা আদায়ের দর কষাকষি টাকা লেনদেন এর অডিও এবং ভিডিও ক্লিপ হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীরা আমাদেরকে এসব কথোপকথন অডিও এবং ভিডিও আমাদেরকে পাঠিয়েছেন।অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘুষ ও দুর্নীতির গ্যংস্টার জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসের হুমায়ুন নামের এক কর্মচারী। দীর্ঘ তিন মাস থেকে ভুক্তভোগী সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে তিনিই অর্থ উৎকোচ গ্রহণ করছেন।তার কাছে টাকা দিলে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে সকল কাজ সুসম্পন্ন হয়।

এবিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে আমি অফিসের কাজে সিলেট শহরে আছি। বিষয়গুলো জানতে পেরেছি। আমি খোঁজ নিবো।

এবিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-বশিরুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, বিষয়গুলো জেনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এবিষয়ে সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, আসলে সিলেট জেলায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে চাকরিজীবী লোক খুব কম। শূন্য পদের কারণে সিলেট জেলার কিছু উপজেলা নির্বাচন অফিস ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা দিয়ে কার্যক্রম চলছে। তাই আমরা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে শুন্য পদের চাহিদা প্রেরণ করেছি। আশাকরি খুব দ্রুত এই শুন্য পদের সমাধান আসবে। জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস কর্তৃক ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি করানো এবং ভুক্তভোগীদের কাছে উৎকোচ গ্রহণ বা দাবির বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *