সিলেট নগরে গতকাল রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা ভারী বর্ষণে সিলেট নগর ডুবছে। ভারী বর্ষণ ও নদীর পানি বাড়ায় গতকাল রাত থেকেই সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ।
নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রবিবার রাত দশটার দিক থেকে টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ বৃষ্টি বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের প্রায় শতাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। কোথাও সুরমা নদীর পানি উপচে প্রবেশ করে, আবার কোথাও ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমেছে। বিভিন্ন বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। অনেকের রান্নাঘরও তলিয়ে গেছে।
রাতে বিভিন্ন স্থান ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের উপশহর, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, তেরোরতন, সাদারপাড়, সোবহানীঘাট, যতরপুর, কুশিঘাট, তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, জিন্দাবাজার, সাগরদিঘিরপার, চৌহাট্টা, পায়রা, দরগামহল্লা, মুন্সীপাড়া, হাওয়াপাড়া, নাইওরপুল, সোনারপাড়া, বালুচর, মীরের ময়দান, কাষ্টঘর, পুলিশ লাইনস, কেওয়াপাড়া, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, লালদিঘিরপার, খাসদবির ও মেজরটিলা এলাকা মধ্যরাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকার সড়কও তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে দোকানে পানি ঢুকে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা রিকশা কিংবা হেঁটেই নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
নগরের মির্জাজাঙ্গাল মণিপুরি রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন রাত তিনটার দিকে সিলেট মিররকে বলেন, ‘রাত একটার দিকে বাসায় প্রথমবার পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে কিছুটা কমে ফের তিনটার দিক থেকে পানি ঢুকছে। এখন আর হাল ছেড়ে দিয়েছি।’
এর আগে গত ২৯ মে রাতে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টি হয়। এ সময় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্যাকবলিত সিলেট সিটি করপোরেশনের কিছু এলাকা ও আটটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মূলত জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়। ডুবে গেছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অসংখ্য বাসাবাড়িও প্লাবিত হয়েছে। তবে দুই দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হলেও গতকাল রাত থেকে ভারী বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে।
ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নগরের অনেক বাসিন্দা ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন। এসব স্ট্যাটাসে তাঁরা অভিযোগ করেন, নগরকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের গত এক দশকে হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু কোনো সুফল মিলছে না। আবার ২০২২ সালের প্রলয়ংকরী বন্যার পর নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী খননের জোর দাবি উঠলেও তা করা হয়নি।
শেয়ার করুন