টিসিবির ডিলারশিপে আসছে পরিবর্তন

জাতীয়

নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রম। এজন্য নতুন নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, টিসিবির ডিলারশিপ পেতে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সুপারিশ ও মতামত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ও নবায়ন করা ডিলারের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ডধারীদের মধ্যে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। এতে আগের তুলনায় অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবার নিয়মিত টিসিবির সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও বিগত সময়ে ব্যাপক অনিয়মের কারণে ৫৩ লাখ কার্ড স্থগিত করা হয়েছে। তথ্য হালনাগাদের মাধ্যমে কোটি পরিবার পাবে স্মার্ট কার্ড। বর্তমানে ৪৭ লাখের কিছু বেশি পরিবার এ সুবিধা পাচ্ছে।

বিগত সময়ে এক এনআইডিতে একাধিক ফ্যামিলি কার্ড, এক পরিবারে একাধিক জনের নামে কার্ড, আইডি কার্ড অনুযায়ী মোবাইল নম্বরের অমিল, নতুন ও পুরোনো আইডি দিয়ে পৃথক কার্ড তৈরি, কার্ডের কিউআর কোড দিয়ে ডুপ্লিকেট কার্ড তৈরির মতো সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় এসব কার্ড স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর বন্ধ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন যাচাই-বাছাই শেষে তথ্য দিলেই বাকি কার্ডগুলো স্মার্ট হবে।

এ বিষয়ে টিসিবির যুগ্ম পরিচালক ও মুখপাত্র হুমায়ুন কবির আমার দেশকে বলেন, ডিলারদের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ডিলারশিপ নবায়নের লক্ষ্যে আবেদন গ্রহণ করছে টিসিবি। তবে এ পর্যন্ত কত আবেদন জমা পড়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি। যাচাই-বাছাই শেষে বলতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফ্যামিলি স্মার্ট কার্ডের বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমানে ৪৭ লাখের বেশি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূলে পণ্য বিতরণ করছে টিসিবি। স্থানীয় প্রশাসন তথ্য হালনাগাদের পর পর্যায়ক্রমে এক কোটি স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে।

মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে টিসিবির পণ্য নিয়ে নানা কেলেঙ্কারির সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ডিলারশিপ ও পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। জুলাই বিপ্লবের পরও ওইসব ডিলার ও ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়ে টিসিবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আট হাজার ৫০০ জন ডিলার এবং এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড তত্ত্বাবধানে রয়েছে টিসিবির ১৪টি আঞ্চলিক কার্যালয়। অনিয়মের অভিযোগে এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক ফ্যামিলি কার্ড স্থগিত করা হয়। বর্তমানে ৪৭ লাখের কিছু বেশি সক্রিয় কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। বাকি প্রায় ৫৩ লাখ কার্ড হালনাগাদের কাজ চলছে। স্থানীয় প্রশাসন তথ্য দিলে স্মার্ট কার্ড তৈরি করে তা বিতরণ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিসিবির ৮ হাজার ৫০০ জন ডিলারের মধ্যে ৮ হাজারই আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পর তুমুল বিতর্কের পর নড়েচড়ে বসেছে টিসিবি। নতুন করে মাঠপর্যায়ে তথ্য হালনাগাদ শুরু করে সংস্থাটি। আর এতেই বেরিয়ে আসছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয়করণের বিশাল চিত্র।

বিগত হাসিনা আমলে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের অনুগত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পছন্দের লোকদের। তাদের কাছে দলীয় ডিলাররাই পণ্য বিক্রি করে আসছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে অধিকাংশ ডিলার পলাতক। আওয়ামী লীগের পদধারী হওয়ায় অনেকের নামে মামলা হয়েছে। অনেকে আত্মীয়স্বজন কিংবা স্থানীয় অন্য দলের নেতাকর্মীর সহায়তা নিয়ে পণ্য তুলে সরবরাহ করছেন। কেউ কেউ বিক্রি করে দিয়েছেন ডিলারশিপ। প্রকৃত ডিলার না থাকায় অনেক জায়গায় পণ্য সরবরাহ বন্ধ আছে। কিছু স্থানে বিকল্প উপায়ে সরবরাহ করছে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিসিবি প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আট হাজার ৫০০ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেকই নিয়োগ হয় ২০২২ সালে। এমপি-মন্ত্রীর ডিও লেটার, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের তদবিরে নিয়োগ হয় তাদের। দলের বাইরে কাউকে ডিলারশিপ দেয়নি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। ডিলারদের সবাই ওই ঘরানার লোকজন। বিপ্লবের পর অনেকেই ভোল পাল্টে নিজেদের বিপ্লবী দাবি করে ডিলারশিপ রক্ষার চেষ্টাও করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০০৯ সাল থেকে ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করে টিসিবি। ওই সময় টিসিবির ট্রাক নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়ে পণ্য বিক্রি করত। করোনা মহামারির পর আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করা হয়। আর এসব কার্ডের বিপরীতে পণ্য সরবরাহে নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন করে আট হাজার ৫০০ জন ডিলার। এসব ডিলার নির্ধারিত দোকানে এলাকাভিত্তিক কার্ডধারীদের টিসিবি পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। প্রত্যেক কার্ডধারী প্রতি মাসে ১০০ টাকা দরে দুই লিটার ভোজ্যতেল, ৬০ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল ও ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *