টুকুর বক্তব্যের শক্ত প্রতিবাদ জামায়াতে ইসলামীর

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বক্তব্যকে অশালীন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিএনপির এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন- তা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এটি কোনো রাজনীতিবিদের ভাষা হতে পারে না। তার এ বক্তব্য স্বৈরাচারী শাসনকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, যে মুহূর্তে দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর, সে সময় তার এ বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। তার বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, তিনি জনগণের ভাষা বুঝতে অক্ষম এবং তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেন না।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আবদুল হালিম বলেন, বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারের জুলম-নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। যে দলটির আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যসহ ৫ জন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে; আরও ৬ জন শীর্ষ নেতাকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে এবং ৩ জন নেতা কারাগারে ইন্তেকাল করেছেন – সেই দলটি সম্পর্কে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। তার বক্তব্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও বেআইনি ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে তার কথা ও মর্মবেদনায় জনগণের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, কার স্বার্থে এবং কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি এ বক্তব্য প্রদান করেছেন? আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামী কখনো কোনো আপস, গোপন ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এবং করার প্রশ্নই আসে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াত শব্দটিকে ‘উর্দু’ ভাষা বলে উল্লেখ করে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে এ ধরনের অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান করা থেকে সংশ্লিষ্ট সবাই বিরত থাকবেন।

যা বলা হয়েছিল টুকুর বক্তব্যে-

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটিকে বেআইনি ঘোষণা না করার পেছনে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গোপন সম্পর্ক কাজ করছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার সিকদার রিয়েল এস্টেট–সংলগ্ন একটি মাঠে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মুখে প্রায়ই শুনি, যেটা বুলি হয়ে গেছে। তারা প্রায়ই বলে, বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে আওয়ামী-জামায়াত, আওয়ামী–জামায়াত বলার। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামী লীগও উর্দু—দুটো একসঙ্গে মিলবে ভালো। কেননা, ওনারা (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে, কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করে না। তাহলে কি আমি বলব, ওনাদের পরকীয়া প্রেম চলছে!’

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা বলেন যুদ্ধাপরাধী দল। আমি অস্বীকার করি না, কিন্তু নিবন্ধন বাতিল করলেন, বেআইনি ঘোষণা করলেন না। তার অর্থ আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে তলেতলে বন্ধুত্ব করছে, তার জন্য বাতিল করে না। তাই আজ থেকে আওয়ামী-জামায়াত হবে, বিএনপি-জামায়াত আর হবে না।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *