টোকাইদের নেশার আড্ডা ‘জনতার কামরান’ চত্বরে

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একেবারে নাকের ডগায় সিটি পয়েন্টে অবস্থান জনতার কামরান চত্বরের। দৃষ্টিনন্দন এই চত্বর এখন আবর্জনা নোংরায় ভরপুর। নেশাখোরদের আড্ডাখানা। দিনে দুপুরে এখানে চলে টোকাই আর ভবঘুরেদের নেশার আড্ডা। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় দুই মাসের অধিক ধরে নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে শুভেচ্ছা জানানো বিশাল দুটি ফ্যাস্টুনে চত্বরটি ঢেকে দেওয়া। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের ছবি সম্বলিত ছাত্রলীগ কর্মী ইমাজ উদ্দিনের ছবিসহ তার নামে এই ফ্যান্টুন টাঙানো। মাঝেমধ্যে ঝড়তুফানে ফ্যাস্টুন ছিড়ে গেলে নতুন করে আবার লাগানো হয়। শুরুতে মেয়র দেখতে চাই নামে লাগানো হলেও আনোয়ারুজ্জামান মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন করে ফ্যাস্টুন লাগানো হয়েছে। এতে দৃষ্টিনন্দন এই চত্বর বাইরে থেকে ঢাকা পড়ে গেছে। এই সুযোগে এর ভেতরে শুরু হয়েছে ভবঘুরে আর টোকাইদের নেশার আড্ডা। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে দেখা যায় চত্বরের পূর্বদিকের সিঁড়িতে সমাবেশ করছেন যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের পেছনেই বিশাল ফ্যাস্টুনে ঢাকা চত্বরের গোলকার অংশে চলছে টোকাইদের (ড্যান্ডি) নেশার আড্ডা। দিনদুপুরে সিসিক, পুলিশ, প্রশাসন এবং আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সামনে কামরানের নামে স্থাপনার কীভাবে এত বেহাল অবস্থা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চত্বরের আগের অবস্থা। ফাইল ছবি

 

এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জুলাই সিটি পয়েন্টে ‘নগর চত্বর’ নামে এর উদ্বোধন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এরপরই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র মরহুম বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নামে এর নামকরণের দাবি ওঠে। কামরান সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার ও চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সর্বশেষ সিসিকের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ১৫ জুন কোভিড আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। কামরান জনতার কামরান হিসেবে নগরবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন। ফলে নগর চত্বরের নাম কামরান চত্বর করার দাবি একসময় আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের মুখে দুইদিন পর ২৮ জুলাই সিসিকের এক সভায় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ‘নগর চত্বরটি’ ‘কামরান চত্বর’ হিসেবেই ঘোষণা করা হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র আরিফ এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

সিলেটের প্রতীকখ্যাত আলী আমজদের ঘড়িঘর ও বাসাবাড়ির আদি কাঠামোর আদলে তৈরি এই নান্দনিক স্থাপনা সবার দৃষ্টি কাড়ে। সবুজ ঘাস আর ফুলগাছ দিয়ে সাজানো এই স্থাপনা ভোরের আলোয় ঝলমল করতো প্রতিদিন। ট্রেন কিংবা বাসে যারা সিলেটের বাইরে থেকে ক্বীনব্রিজ হয়ে শহরে প্রবেশ করতেন তারা এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি নিতেন। রাতের উজ্জল আলোয় ঝিকিমিকি করতো এর চারপাশ। একেবারে মূল শহরের ব্যস্ত সিটি পয়েন্টে ছোট্টো সুন্দরের আঁধার এরকম একটি স্থাপনা সবার প্রশংসা কুড়ায়। সিলেটবাসীর ভালোবাসা আর সুন্দরের প্রতীক এই চত্বর এখন আবর্জনায় ভরা। নগরীর প্রবেশদ্বার ও সিটি কর্পোরেশনের মূল ফটকের একেবারে নাকের ডগায় চত্বরের এই অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। পাশাপাশি যাদের ব্যানারে কামরান চত্বর ঢেকে গেছে তাদের নগরীর সৌন্দর্য্য ও কামরানের প্রতি ভালোবাসা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। প্রশ্ন তুলেছেন সিসিক কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়েও।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নূর আজিজুর রহমান বলেন, ব্যস্ততার জন্য আমরা এদিকে নজর দিতে পারিনি, রোববারের মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর এসএমপি’র কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *