ডলার সংকটে কমছে ভোগ্যপণ্য ও কাঁচামাল আমদানি

জাতীয়

দেশে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালসহ সার্বিক আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মোট আমদানি কমেছে সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি। শুধু শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এজন্য ডলার সংকট ও উচ্চমূল্যকে দায়ী করছেন আমদানিকারকরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনা গেলে দূর হবে ডলার সংকট। বাড়বে উৎপাদনশীল খাতের আমদানি।

ডলারের প্রবাহ বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে আমদানির জন্য এলসি খোলার হার বেড়েছে। যদিও, ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বাড়লেও চাহিদামতো এলসি খুলতে পারছেন না তারা। পাশাপাশি, ডলারের বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।

ডলার সংকট কাটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর ফলে, বিলাস পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমলেও, ডলার সরবরাহ খুব একটি বাড়েনি। ফলে কমছে শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য ও মূলধনী যন্ত্রের আমদানি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি ২৪ শতাংশের বেশি, আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। কমেছে পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমাদানিও।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘সরকারকে এখন নীতি নিতে হবে আবার আগের মতো। আমাদেরকে ফ্রিলি ইমপোর্ট করার সুযোগ দিতে হবে। তখন ইন্ডাস্ট্রির চাকা ঘুরবে, ইমপ্লয়মেন্ট থাকবে এবং যখন দেশে প্রোডাকশন আসবে তখন ইনফ্লেশনও নেমে আসবে।’

বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে গিয়ে যদি এখন আমরা বলি যে এলসি করব, তখন ওনাদের মুখের যে সুন্দর হাসি থাকে সেটি মলিন হয়ে যায়। সেখান থেকেই বোঝা যায় যে ডলারের অ্যাভেইলেবিলিটি অনেকটাই কম আগের থেকে।’

গত মে মাসে ২২৫ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের সরবরাহ বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘১২২–২৩ এই রেটে কিন্তু এখন ডলার মিলছে না। কোন ব্যাংক স্পেসিফিকভাবে দু–চারটা করতে পারে। বাট ইনজেনারেলি এটা করা সম্ভব নয়।’

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এম এস সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন রেমিটেন্স আসে ২৫ বিলিয়ন আর টাকা পাচার হয়ে যায় প্রায় ২৭–২৮ বিলিয়ন ডলার। আমরা যদি সেই ২৮ বিলিয়ন ডলারকে প্রতিবছর নিয়ে আসতে পারি, তাহলে তো আমাদের সমস্যাটা সমাধান হয়ে যায়।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে আমদানির সংকট নিরসনে ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে হবে। এজন্য হুন্ডি ব্যবসা ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *