চারশত বছর আগে মোঘল শাসকের যে ঢাকার গোড়াপত্তন করেছিল, তা ছিল বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ শাসকেরা এই বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করেই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে সম্প্রসারণ করেছিল। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যই নয়, তারা এই বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। যার নিদর্শন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে পুরাণ ঢাকার সদরঘাট-লক্ষ্মীবাজার এলাকা।
এ এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮টি। চলুন এক নজরে দেখি আসি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোঃ
ঢাকা কলিজিয়েট স্কুল, ১৮৩৫
এ বিদ্যাপীঠটি অবিভিক্ত ভারতের প্রথম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৩৫ সালের ১৫ জুলাই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ বিদ্যালয়টির গোড়াপত্তন করেছিল। তখন এর নাম ছিল ঢাকা ইংলিশ সেমিনারী। ১৯০৮ সাল থেকে এ স্কুলটি জিলা স্কুলের মর্যাদা পেয়ে আসছে।
পোগজ স্কুল, ১৮৪৮ সাল
বাংলাদেশের প্রাচীন বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ঢাকা শহরে স্থাপিত প্রথম বেসরকারী বিদ্যালয়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিকোলাস প্রোগোজ। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পোগোজ স্কুলের সাথে একত্রীভূত হয়েছে এবং এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ১৮৬৩ সাল
১৮৬৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রজসুন্দর বসু ব্রহ্ম স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। এ স্কুলটি মানিকগঞ্জের বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর হাত ধরে গড়ে উঠে আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমে ভারতীয় আইন পরিষদে জগন্নাথ কলেজ আইন, ১৯২০ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ,২০০৫ পাশের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতকে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাতটি অনুষদে ৩৮ টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।
সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ১৮৮২ সাল
এটি একটি ক্যাথলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৮২ সালে বেলজিয়ামের বেনেডিক্টাইন ধর্মযাজক গ্রেগরি ডি গ্রুট প্রতিষ্ঠা করে। ১৯১৪ সালে বাংলাদেশ স্কাউটের সূচনা হয় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বাস্কেটবল খেলার প্রচলনও হয়েছিল এ বিদ্যাপীঠকে কেন্দ্র করেই। এমনকি ঢাকার নটর ডেম কলেজের জন্মও হয়েছিল প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠে। সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলকে ২০১৬ সালে কলেজে রুপান্তরিত করা হয়।
কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ১৮৭৪ সাল
মূলত এটি ছিল পূর্ব বাংলার মুসলিমদের জন্য তৈরি প্রথম সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৭৪ সালে হাজী মুহাম্মদ মহসীন ফাণ্ডের আর্থিক সহায়তায় কলকাতা মাদ্রাসার আদলে মোহসীনিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা পরবর্তীদের ঢাকা মাদ্রাসা নামে খ্যাতি অর্জন করে। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যাপীঠের কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। বর্তমানে ২০১৭ সাল থেকে কলেজটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
ঢাকা গর্ভমেণ্ট মুসলিম হাই স্কুল, ১৮৭৪
১৮৭৪ সালে হাজী মুহাম্মদ মহসীন ফাণ্ডের আর্থিক সহায়তায় বর্তমান কবি নজরুল কলেজে কলকাতা মাদ্রাসার আদলে মোহসীনিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা পরবর্তীদের ঢাকা মাদ্রাসা নামে খ্যাতি অর্জন করে। ১৯১৫ সাল পর্যন্ত হাজী মুহম্মদ মহসীন ফান্ড থেকে এ মাদ্রাসার খরচ বহন করা হয়। ১৯১৬ সালে মাদ্রাসার অ্যাংলো- পার্সিয়ান বিভাগটি পৃথক হয় যায়। যার নাম হয় ঢাকা গর্ভমেণ্ট মুসলিম হাই স্কুল। বর্তমানে এটি কবি নজরুল কলেজের বিপরীত পাশে অবস্থিত।
ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ১৮৭৪
১৮৭৪ সালে ঢাকা মোহসিনীয়া মাদরাসা পরবর্তী সময়ে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছিল। প্রথমটি ঢাকা মুসলিম গভঃ হাই স্কুল, দ্বিতীয় টি কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং তৃতীয়টি হল ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়টি কবি নজরুল সরকারি কলেজের এলাকায় অবস্থিত।
সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, ১৯১২
এটি একটি মিশনারিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯১২ সালে Congregation of Our Lady of Christian Missions স্কুলটি একটি ইংরেজি-মাধ্যম স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায়। ১৯১২ সালের পূর্বে সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে ছেলে ও মেয়ে উভয় পড়াশোনা করত। ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে মহাবিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন দেয়।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ১৯৪৯
পাকিস্তান শাসনামলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপাধি অনুসারে কায়েদ-ই-আজম কলেজ নামে যাত্রাশুরু করে এ প্রতিষ্ঠানটি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম রাখা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ১৯৮৪ সালে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হলে কলেজটির নাম হয়- সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। বর্তমানে ২০১৭ সালে কলেজটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর মিলিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।
বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৫১
১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি পুরান ঢাকার কোতয়ালী থানাধীন বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল, ১৯৬৮
লক্ষ্মীবাজারের মেইনরোড সংলগ্ন একটি বেসরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে ১৯৬৮ সালে।
সেন্ট সিলভেস্টার টিউটেরিয়াল, ১৯৮৬
লক্ষীবাজারের শ্যামাপ্রসাদ চৌধূরী লেনে অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৮৬ সালে। বর্তমানে প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে পাঠ দান করা হয়।
মহানগর মহিলা কলেজ, ১৯৯৭
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত একমাত্র কলেজ এটি। বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক কোর্সও চালু রয়েছে।
হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ২০০৪
ইংলিশ মিডিয়াম এ স্কুলটি যাত্রা শুরু করে মিরপুরে ২০০৩ সালে। এর পরের বছরই ২০০৪ সালে সদরঘাটে খোলা হয়েছিল এর দ্বিতীয় শাখা।