মাঝে তাতে খানিকটা ভাটা পড়েছিল, ইউটিউবের যুগে এসে ঢাকার টিভি নাটক আরও জনপ্রিয় হতে থাকে ভারতে। সেই পালে নতুন হাওয়ার সঞ্চার করেছে ওয়েব সিরিজ। ওটিটির যুগে বাংলাদেশের যাত্রা খুব বেশি দিনের নয়, আগে ওয়েব সিরিজের জন্য নেটফ্লিক্সের পর্দায় চোখ রাখতে হতো দর্শকদের। এখন হইচই, চরকিতেই ঢাকার ওয়েব সিরিজের দেখা মেলে।
‘তাকদীর’ মুক্তির পর ঢাকার ওয়েব সিরিজে রীতিমতো ঝড় উঠেছিল, সেই ঝড়ের হাওয়া ভারতেও লেগেছিল। ভারতীয় তরুণদের মধ্যে ঢাকার ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ছে। মোবাইলের স্ক্রিন ছাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, আসামের শহর কিংবা গ্রামের চায়ের আড্ডায়ও ঢুকে পড়েছে হইচই ও চরকির ‘মহানগর’, ‘কাইজার’, ‘পেট কাটা ষ’, ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’।
মহানগর দেখে নির্মাতা আশফাক নিপুণকে ফোন করেছিলেন ভারতীয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। টুইট করে নির্মাতা ও সিরিজের অভিনেতা মোশাররফ করিমকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ঢাকা শহরের গল্পে নির্মিত সিরিজটি কলকাতার দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, তা কল্পনাও করেননি আশফাক নিপুণ।
আশফাক নিপুণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কারণেই হোক, আমাদের ছবি দেশের বাইরে যায় না। ‘মহানগর’-এর মতো বড় বাজেটে সাহসী গল্পের কাজ টিভিতেও করতে পারি না। যে কারণে গ্লোবাল অডিয়েন্সকে দেখাতে পারিনি। সিরিজটি প্রচারের পর ভারত থেকে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। তাকদীর ও মহানগর দিয়ে বাংলাদেশের সিরিজের সঙ্গে পরিচিতি ঘটেছে ভারতীয় দর্শকদের। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি কাজ তাঁদের ধরে রেখেছে।’
চরকির ‘সিন্ডিকেট’, ‘ঊনলৌকিক’, ‘শাটিকাপ’, ‘পেট কাটা ষ’ নিয়ে আলোচনা চলছে ভারতে, ‘পেট কাটা ষ’ দেখে চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদোয়ান রনিকে কাজটির প্রশংসা করেছিলেন ভারতীয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি। রেদোয়ান রনির ভাষ্যে, ‘ঊনলৌকিক প্রচারের পর কলকাতা থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছিলেন তাঁরা। দর্শকদের বাইরে নির্মাতা, শিল্পী-কলাকুশলীরাও চরকির কনটেন্টের প্রশংসা করেছেন। পেট কাটা ষ প্রচারের পর ভারতীয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি আমাকে ফোন করে বলেছেন, অসাধারণ কাজ হয়েছে। ‘সিন্ডিকেট’ নিয়েও ভারতে বেশ আলোচনা হয়েছে।’
মেসেঞ্জার, হোয়াটসআপে যোগাযোগ করা হয় বেশ কয়েকজন ভারতীয় দর্শকের সঙ্গে। ঢাকার ওয়েব সিরিজ কেন পছন্দ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় দর্শকেরা বলছেন, ঢাকার সিরিজগুলো দর্শকদের আগ্রহ ধরে রেখে পর্দার সামনে বসিয়ে রাখতে পারছে আর গল্পগুলো আশপাশ থেকে নেওয়া। ফলে সিরিজের গল্পের সঙ্গে দর্শকেরা সহজেই ‘রিলেট’ করতে পারছে।
ভারতীয় দর্শক অভিজিৎ রায় চৌধুরীর ভাষ্যে, ‘কারাগার সিরিজের কথায় বলি, শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগেও ধরতে পারিনি কী হতে চলেছে। দর্শকদের টানটান উত্তেজনার মধ্যে বসিয়ে রেখেছে। কলকাতার ওয়েব সিরিজগুলো দর্শকদের এভাবে বসিয়ে রাখতে পারছে না। কলকাতার গল্পগুলো নিজেদের রুটের বাইরে চলে যাচ্ছে। গল্পগুলো আশপাশে দেখতে পাই না। কিন্তু বাংলাদেশের সিরিজের গল্পগুলোর সঙ্গে আমি খুব সুন্দরভাবে রিলেট করতে পারছি, চরিত্রগুলো আমাদের আশপাশে পাওয়া যায়।’
অমিয় চট্টোপাধ্যায় নামে কলকাতার আরেক দর্শক বলেছেন, কলকাতার সিরিজের তুলনায় বাংলাদেশের সিরিজ অনেক এগিয়ে আছে। কালার গ্রেডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরসহ যাবতীয় পোস্টপ্রোডাকশনের কাজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
ভারতীয় দর্শকদের পছন্দের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশোসহ অনেকেই আছেন। সদ্য মুক্তি পাওয়া কারাগার সিরিজে দারুণ অভিনয় করে আলোচনায় থাকা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার ওয়েব সিরিজের মূল শক্তি মৌলিক গল্প; সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণ একে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। তাকদীর, কারাগার অভিনেতা বলেন, ‘তাকদীর’ দিয়ে শুরু হওয়ার পর যে কটি ভালো কাজ গেছে, সবই আমাদের গল্পের ওয়েব সিরিজ ছিল। যেগুলো কলকাতায়ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কলকাতায় আমাদের গল্পের চাহিদা আছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের কাজ হচ্ছে ঢাকায়।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান সিরিজে তাসনিয়া ফারিণকে আবিষ্কার করেছেন ভারতীয় নির্মাতা অতনু ঘোষ। তাঁর পরিচালনায় টালিগঞ্জের আরও এক পৃথিবী সিনেমায় অভিনয় করছেন ফারিণ। ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বিনি সুতোয়’ সিনেমার নির্মাতা অতনু ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান সিরিজে ফারিণকে দেখে ভালো লাগায় তাঁকে নিয়ে সিনেমাটি করছি।’