কথার লড়াই থেকে সহিংসতার পর বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়লেও গোলযোগহীনভাবেই তা শেষ হল।
শনিবারের এই সমাবেশ থেকে সরকার হটাতে ১০ দফা ঘোষণা করেছে দলটি; যদিও এই দাবিগুলো আগেও তারা জানিয়ে আসছিল। তবে সমাবেশ থেকে ঘোষণা বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের।
আর ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলি করবে বিএনপি। ঢাকাসহ সারাদেশে এই মিছিল হবে।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বন্দি থাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১০ দফা ঘোষণা করে বলেন, “এই ১০ দফা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দফা। এই দাবি জনগণের দাবি, এটা মানু্ষের দাবি।
“আমরা এদেশের সকল জনগণকে এই ১০ দফা দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আগামী ২৪ ডিসেম্বরে গণমিছিলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন
সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি গত অক্টোবরে দিয়েছিল বিএনপি।
এই কর্মসূচি থেকে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে- এমন ঘোষণার পর দলটির কোনো কোনো নেতা এমনও বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে চলবে।
তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে শুরু হয় বিএনপি নেতাদের কথার লড়াই। এরপর ঢাকার সমাবেশস্থল নিয়ে বাঁধে গোল। বিএনপি নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশটি করতে চাইলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ।
এরমধ্যে গত বুধবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীদের উপর চড়াও হয় পুলিশ। তখন সংঘর্ষে নিহত হয় একজন, আহত হয় অনেকে।
এরপর পুলিশ তল্লাশি চালাতে ঢুকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, সেখান থেকে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ কয়েকশ’ নেতা-কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে।
এরমধ্যেই সমাবেশের স্থান নিয়ে নাটকীয়তা চলতে থাকে। শেষে আগের দিন সায়েদাবাদের পাশের গোলাপবাগ মাঠটিতে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
অনুমতি পাওয়ার পরপরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা সিটি করপোরেশনের সেই মাঠে জড়ো হতে থাকেন, অনেকে রাতও কাটান সেখানেই। শনিবার সকাল থেকে আরও মিছিল আসতে থাকে; তারপর দুপুরে সমাবেশে বক্তৃতা শুরু হয়ে বিকালে তা শেষ হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এই ১০ দফা উপস্থাপন করার কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই দফাগুলো নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত ও সম্মতি নেওয়া হয়েছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এই ১০ দফার প্রতি একাত্মতা ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা আশা করি, এই দফার সাথে তারাও একাত্মতা ঘোষণা করবেন। তারা আগামী দিনে এই ১০ দফা আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি আন্দেোলন কর্মসূচি আমরা যুগপৎভাবে পালন করব। এই সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্য ধৈর্য সহকারে আপনারা আমাদের এই আন্দোলন-কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং পুলিশের হামলায় একজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সব মহানগরী ও বিভাগীয় সদরে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।
প্রধান সম্পাদকঃ সারওয়ার খান
সম্পাদকঃ জাকের খান (রুবেল)
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫