ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি

শিক্ষা

চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হয়েছে এবং কাজটি সংবিধানের অন্যতম চেতনা ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিপন্থি।

রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের অভিযোগটি উঠেছে।

এ পত্রের একটি প্রশ্ন হলো-‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’

শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে-এ ধরনের লিখিত নির্দেশনা এবং প্রশ্ন প্রণেতা ও প্রশ্ন সেটারদের ওরিয়েন্টশন করানো হয়। এর পরেও অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক একাত্তরকে বলেন, এর মাধ্যমে খুবই দুঃখজনক একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। প্রশ্ন পত্র প্রণীত, সমীক্ষণ, বিলি করার সময়ও বিষয়টি নজরে আসেনি; বিষয়টি দুঃখজনক। এটি ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর একটি অপচেষ্টা বলেই মনে হয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানের একটি বড়ো উপাদান। কিন্তু প্রশ্নকারী শিক্ষকদের মধ্যে সংবিধানের ন্যূনতম কোনো প্রভাব নেই। কোনো শিক্ষকের মধ্যে যদি সংবিধানের ন্যূনতম স্বাক্ষরতা থাকে তবে তিনি এমন প্রশ্ন তৈরির করতে পারেন না। এখানে সরাসরি একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেকটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরোধ লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রফেসর সিদ্দিক বলেন, যেখানে আমরা শিক্ষকদের মধ্যে ধর্ম নিরপেক্ষ মন মানসিকতা তৈরির চেষ্টা করবো, সেখানে এমন প্রশ্নে ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির পায়তারা করা হয়েছে।

ঢাবির সাবেক এই উপাচার্য বলেন, এখানে শুধু নামগুলো মধ্যেই যে ধর্মীয় বিষয়গুলো টেনে আনা হয়েছে তা নয়, সেখানে মুসলমান শব্দ ব্যবহার, গরু কোরবানি দেওয়ার বিষয়গুলো অতিরঞ্জিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে বলে মনে হয়। এই প্রশ্নপত্র যারা প্রণয়ন এবং মডারেট করেছেন তাদের সবারই এখানে দায় আছে। তাদের এই দায় নিতে হবে। এটা সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থি একটি কাজ হয়েছে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টিতে আসা উচিত। সেই সঙ্গে দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ বলেন, ভবিষ্যতে প্রশ্ন করার নামে সুকৌশলে ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টি করার চেষ্টা যাতে না করা হয় সেজন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ কোনো বক্তব্য যেন না থাকে সে জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে ওরিয়েন্টশন করানো হয়। প্রশ্নপত্র দেখার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নে বিতর্কিত সাম্প্রদায়িক উদ্দীপক ছিলো।ট্রেজারি থেকে পান্ডুলিপি এনে দেখে প্রশ্ন প্রনয়নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *