
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এই বাংলার পক্ষে দাঁড়িয়েছে সিলেট। কিন্তু তখন আমরা আমাদের পূর্ণ সিলেট পাইনি। আসামের সাথে সিলেটের বহু অংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই পূর্ববঙ্গকে ঠকানো হয়েছে সেই বৃটিশ আমল থেকে। পাকিস্তান আমলে এবং আওয়ামী লীগ আমলেও সিলেটকে ঠকানো হয়েছে। সিলেটে গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে ঠকানো হয়েছে।
সিলেটে জুলাই পদযাত্রার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সিলেট বাংলাদেশের আত্মপরিচয়। বহু জাতিগোষ্টির বসবাস এখানে। ১৯৪১, ১৯৭১ এমনকি জুলাই অভ্যত্থানে সিলেট বারবার রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ বহু সংস্কতির বহু ভাষার দেশ হবে- সিলেট তার অন্যতম প্রতীক।
জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেটের প্রবাসীদের অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, সিলেটের প্রবাসীরা গণঅভ্যুত্থানে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা তাদের ভুলবো না। এই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই প্রবাসীরা বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণের অংশ হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে জুলাই ঘোষণা পত্র ও জুলাই সনদ আমরা আদায় করে নেবো।
এনসিপির মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় এতে এনসিপির মূখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এনসিপি কোন চাঁদাবাজাদের দল নয়। সন্ত্রাসীদের দল নয়। এনসিপি উঠে এসেছে সংকট থেকে। ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করে এনসিপি ওঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এনসিপি ওঠে এসেছে।
তিনি বলেন, এতোদিন আমাদের দেশটা হয়েছে, বসুন্ধরার, প্রশাসনের, দেশটা হয়েছে আর্মিদের। আমাদের দেশটা জনগনের হয়ে ওঠেনি। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এনসিপির নেতৃত্বে ক্ষমতা জনতার হাতে ফিরিয়ে দেবো।
তিনি বলেন, আমাদের সংকট এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ আবার ফিরতে পরবে না। তবে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। চাঁদাবাজ ও দখলদার বাংলার মাটিতে আর থাকতে পারবে না।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপি নেতা নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি, অর্পিতা শ্যাম দেব প্রমূখ।
এরআগে বিকেল সাড়ে ৫টায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে শুরু হয় এনসিপির পদযাত্রা। এতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ দলটির বেখ কয়েকজন কেন্দ্রিয় নেতা এই পদযাত্রায় অংশ নেন। এছাড়া দলটির সিলেটের হাজারও নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। পদযাত্রায় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’. ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’ এমন নানা শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সিলেটের রাজপথ।
তারও আগে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট আসার পথে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে এনসিপি।
এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা এতোদিন গোলামের জীবন যাপন করতাম। বিশেষত হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের শিকার হতে হতো। তবে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে শহীদদের মাধ্যমে আমরা শপথ নিয়েছি- আমরা আর গোলামের জীবন যাপন করবো না।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গলগুলো ঠিকমত খাবার থাকতে হবে। লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এই একবছরে আমাদের অনেক চাওয়া পাওয়া পুরণ হয়নি। তবে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেককিছু সংস্থার হচ্ছে।
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করে এনসিপি। এরপর শহরের আলফাত স্কয়ারে পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র মেরামতের জন্যই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছে। নতুন বাংলাদেশ ও নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনা একটা ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে।’
জুলাই পদযাত্রায় অংশ নিতে বৃহস্পতিবার রাতেই সুনামগঞ্জ এসে পৌঁছান এনসিপির নেতৃবৃন্দ। পরে শুক্রবার সকালে জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের সাথে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
সুনামগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে পদযাত্রা করে শহরের আলফাত স্কয়ারে আসেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
আলতাফ স্কয়ারের পথসভায় সুনামগঞ্জকে তারা নতুন করে গড়ে তুলবেন বলেও উল্লেখ করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘মুজিববাদ নানা ছলেবলে মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মুজিববাদের রাজনীতি বাংলাদেশে হবে না। মুজিববাদের বিরুদ্ধে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুজিববাদ মানে- একদলীয় শাসনব্যবস্থা, লুটপাট, দুর্নীতি, ইসলাম বিদ্বেষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল, দেশে ভারতের কাছে বর্গা দেওয়ার রাজনীতি। সেজন্য মুজিববাদের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষা করতে হবে।’
শেয়ার করুন