শেখ সাদী বলেছেন, ‘একটি সুন্দর বাগান নষ্ট করতে একটি বানরই যথেষ্ট। ’ বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি কেউ যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন, তাহলে দেখবেন শেখ সাদীর বক্তব্য কতটা সত্য।
একজন ব্যক্তির একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে পরিচালিত একটি দল রাজনীতিকে কলুষিত করছে। দেশকে করছে সংকটাপন্ন। গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৫১ বছর পার করেছি। স্বাধীনতার মাসে এসে আমরা যদি ফিরে তাকাই, তাহলে দেখব এখনো আমাদের রাজনীতিতে অনেক অপূর্ণতা, হতাশা, অপ্রাপ্তির বেদনা। স্বাধীনতার মাসে আমরা যদি সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করি, স্বাধীন বাংলাদেশে কি এমন রাজনীতি আমরা দেখতে চেয়েছি আমি নিশ্চিত সবাই এর উত্তরে সমস্বরে বলবেন ‘না’। স্বাধীন দেশে রাজনীতি হবে উন্নয়নের কৌশল নিয়ে। জনগণের কল্যাণ ও ভাগ্য পরিবর্তনের পদ্ধতিকেন্দ্রিক বিতর্ক নিয়ে। স্বাধীন দেশে ভোটের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক তারা মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কুন্ডতর্ক করবে না। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি রাজনীতি করবে না। রাজনীতির নামে কেউ রাষ্ট্রবিরোধিতা করবে না। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্টের অপরিণামদর্শী অপ-তৎপরতা চালাবে না। রাজনীতিতে পারস্পরিক সম্মান এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, ৫১ বছর পরও রাজনীতির নামে রাষ্ট্রবিরোধিতা চলে প্রকাশ্যে। সরকারের সমালোচনা এমন মাত্রা ছাড়া হয় যে রাষ্ট্র এবং জনগণ আক্রান্ত হয়। এখনো কেউ কেউ বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তান বানাতে চায়। রাজনীতিকে কলুষিত করে কেউ কেউ চাঁদাবাজি এবং লুটপাটের হাতিয়ার বানায়। এরা রাজনীতির অসুস্থ, কুৎসিত ধারাকে লালন করে। রাজনীতিকে এরা কলঙ্কিত করে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। এদের একজন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। এই একজন এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় বিষফোঁড়া। তার কারণেই রাজনীতি দূষিত এবং বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ক্রমশ।
সম্প্রতি ইউটিউবে দুই দুর্বৃত্তের সঙ্গে তারেক জিয়ার ছবি দেখে চমকে উঠলাম। সাংবাদিক পরিচয়ে এরা চাঁদাবাজ, প্রতারক এবং ঘৃণ্য রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধী। বিদেশে বসে একটি ইউটিউব চ্যানেলের নামে এরা মানুষকে ব্ল্যাকমেল করে। কুৎসিত, নোংরা ভাষায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠিত এবং সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন এদের ব্যবসা। এরা কোনো বিচারেই সাংবাদিক নয়। এরা আসলে দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা। কিছুদিন আগে দেশের অন্যতম শীর্ষ এক শিল্প পরিবারকে ব্ল্যাকমেল করতে গিয়ে এরা হাতেনাতে ধরা পড়ে। ওই শিল্প পরিবারের এক কর্মচারীর কাছে এরা ৬ লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেছিল। তাদের কথোপকথনের রেকর্ড এখনো ইউটিউবে পাওয়া যায়। ওই কথোপকথনে দেখা যায় এরা কত নিম্নমানের রুচিহীন কুলাঙ্গার। ওই কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর, দেশে-বিদেশে হইচই পড়ে যায়। সবাই এদের কুকর্মে হতবাক হন। এ ন্যক্কারজনক ঘটনার পর দেশে-বিদেশে বিএনপিপন্থি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট, বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরাও হতবাক হয়ে যান। বিএনপিপন্থি যারা বিদেশে বসে সরকারের সমালোচনা করেন, তারাও এ নিকৃষ্ট ব্ল্যাকমেলিং মেনে নিতে পারেননি। সবাই ওই দুর্বৃত্ত চাঁদাবাজদের বর্জন শুরু করেন। এমনকি প্রবাসে থাকা একজন বিএনপিপন্থি সাংবাদিক এদের অপতৎপরতাকে ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সর্বজনীন বয়কটের পরিপ্রেক্ষিতে নিঃশর্ত ক্ষমা চায় এই কুৎসিত দুই কুলাঙ্গার। এরাই নিজেদের লজ্জিত চেহারা দেখিয়ে ক্ষমা চায়। ভবিষ্যতে এরকম জঘন্য তৎপরতা করবে না বলেও নাকে খত দেয়। কিন্তু কিছু মানুষ আছে, যারা একটি অপকর্ম করে ভালো হওয়ার শপথ নেয় এবং দ্রুতই শপথ ভঙ্গ করে। একটি প্রাণী আছে এই জগৎ-সংসারে যার লেজ কখনো সোজা হয় না। শিগগিরই এরাও তাদের লজ্জার মুখোশ খুলে ফেলে। আবার চাঁদাবাজি এবং ব্ল্যাকমেলিংয়ের পুরনো পেশায় ফেরে এরা। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মনগড়া সংবাদ পরিবেশনের ঘোষণা দেয়। বাংলা ছায়াছবির মতো ‘শীঘ্রই আসিতেছে’ এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে এরা টোপ ফেলে। অনেকেই এরকম কুৎসিত, নোংরা অপপ্রচারে ভয় পায়। সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার আতঙ্কে থাকেন। লোকলজ্জা এবং মানসম্মানের ভয়ে তারা ওই চাঁদাবাজ দুর্বৃত্তদের সঙ্গে গোপনে টাকা-পয়সার লেনদেন করেন। তখন তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট আর প্রচার হয় না। আর যারা এদের এসব ব্ল্যাকমেলিংকে পাত্তা দেন না, তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট হতেই থাকে। শুধু ব্যবসায়ীদের থেকেই অর্থ হাতিয়ে নেয় না, অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কদর্য, নোংরা অপপ্রচার করে এরা চাঁদাবাজির জন্য। সমাজে বহুজনের চরিত্র হনন করে এরা নিজেরাই নর্দমার চেয়ে দুর্গন্ধময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবর্জনা বলা হয়। রতনে যেমন রতন চেনে, তেমনি তারেক জিয়াও এই দূষিত নিম্নমানের চাঁদাবাজদের চিনেছেন। এই ত্রয়ীর ছবি অনেক কথা বলে। এর মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হলো। প্রথমত, যে প্ল্যাটফরমে এই দুজন এবং এদের সহযোগীরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও চরিত্র হনন করছে, সেই প্ল্যাটফরমটি আসলে তারেক জিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তারেকই তার মালিক এবং পৃষ্ঠপোষক। তারেকের নির্দেশেই এসব দেশবিরোধী মিথ্যাচার চলছে। তারেকের আগ্রহেই চলছে ব্ল্যাকমেল, চাঁদাবাজি এবং চরিত্র হননের কদর্য এবং কুরুচিপূর্ণ তৎপরতা। এই দুর্বৃত্তদের গডফাদার আসলে তারেক জিয়া। আমি জানি না, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে, চরিত্র হননের হুমকি দিয়ে এসব দুর্বৃত্ত যে অর্থ পেয়েছে, তার ভাগ তারেক জিয়াও পান কি না। তবে তারেক জিয়ার সঙ্গে এদের অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক জিয়া এই দুই দুর্বৃত্তের মতোই আচরণ করেছেন। তারেক-মামুনের জুটির মতোই এই দুর্বৃত্তরা বিদেশে বসে চাঁদাবাজি, প্রতারণা, ভয় দেখানোর অপরাধ জুটি করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই তারেক জিয়া হাওয়া ভবন গড়ে তুলেছিলেন। হাওয়া ভবনের প্রধান কাজ ছিল চাঁদাবাজি, অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায়। জনগণের নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক কারচুপির মাধ্যমে ভোটের ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনাটাই ছিল হাওয়া ভবনের মূল মিশন। এ লক্ষ্যেই তারা লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আগে থেকেই বশীভূত করেছিল। এম এ সাঈদের নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ এবং অনুগত করেছিল। ভারতে গিয়ে যে কোনো শর্তে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পদলেহন করেছিল। আর এই সম্মিলিত চেষ্টার ফলাফল দৃশ্যমান হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে। ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েও আওয়ামী লীগ আসন পায় অনেক কম। তারেক জিয়া জানতেন যে, জনগণের ভোটে তারা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়নি। বরং ‘সিস্টেমেটিক মেকানিজমে’র কারণেই এই ফল। আর তাই নির্বাচনের রাত থেকেই আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু নিশ্চিহ্ন করার নৃশংস মিশন শুরু করে তারেক জিয়া। ১ অক্টোবর রাত থেকেই শুরু হয় তান্ডব। সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর চলে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর। নির্বিচারে চলে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন। এর একমাত্র কারণ ছিল সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। আর এই পরিকল্পিত সন্ত্রাস পরিচালিত হয় হাওয়া ভবনের নির্দেশনায়। ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু আসল ক্ষমতার মালিক হয় তারেক জিয়ার হাওয়া ভবন। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি ছিলেন পুতুল। সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন তারেক জিয়া। মন্ত্রিসভায় প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে তারেকের নিজস্ব একজন প্রতিমন্ত্রী হন। মন্ত্রীদের চেয়েও ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন প্রতিমন্ত্রীরা। ব্যবসা, টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি সব কিছু চলে যায় হাওয়া ভবনের নিয়ন্ত্রণে। যে কোনো ব্যবসা করার আগে হাওয়া ভবনে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হতো। সরকারের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করত তারেকের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু গিয়াসউদ্দিন মামুন। বিসিএস, পুলিশের এসআই কিংবা স্কুলশিক্ষক যাই হতে চান না কেন, টাকা দিয়ে হাওয়া ভবনে নাম লেখানো ছিল বাধ্যতামূলক। নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠানে তালিকা যেত হাওয়া ভবন থেকে। হাওয়া ভবনের তালিকাভুক্ত ব্যক্তি যোগ্য হোক আর না হোক, লিখিত পরীক্ষায় পাস করুক আর না-ই করুক, তাকে চাকরি দিতে হবে। না হলে নিয়োগকর্তার কপালে নেমে আসত দুর্দশা। বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাওয়া ভবনে মাসোহারা দিতে হতো। টাকার অঙ্ক ঠিক করে দিতেন তারেকের পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ থেকে প্রতি মাসে ভ্যাট দিতে হতো হাওয়া ভবনে। এই ভ্যাট আদায় করতেন তারেক নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর এক নম্বর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। প্রধান বন কর্মকর্তা, রাজউকের চেয়ারম্যানের মতো পদগুলো নিলামে উঠত। হারিছ চৌধুরীর পরিচালনায় নিলামে যিনি সবচেয়ে বেশি অর্থ দিতে প্রস্তাব করতেন, ওই পদে তাকেই নিয়োগ দেওয়া হতো। বিদ্যুতের খাম্বা প্রকল্পের কথা সবাই জানে। এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে রীতিমতো লুণ্ঠন করে তারেক-মামুন জুটি। এসব লুণ্ঠিত অর্থ চলে যেত বিদেশে। বাংলাদেশে অর্থ পাচার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় তারেক জিয়ার নেতৃত্বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে দুর্নীতির এই বরপুত্র। যা দিয়ে লন্ডনে বসে আরাম-আয়েশে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। আর এসব কুলাঙ্গারকে কিছু অর্থ দিচ্ছেন নিয়মিত বমি উগলানোর শর্তে।
তারেক জিয়া চেয়েছিলেন ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। এ জন্য প্রথম তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে। বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করতে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনকে একদল ভাঁড়ের আড্ডাখানায় পরিণত করে বিএনপি সরকার। হাওয়া ভবন থেকে দেড় কোটি ভুয়া ভোটারের তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনকে। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করা হয় যেন নির্বাচনে বিএনপি ছাড়া আর কোনো দলের বিজয় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এসব করেও আশ্বস্ত হতে পারেনি তারেক জিয়া। এ কারণেই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার ‘মাস্টারপ্ল্যান’ গ্রহণ করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘটানো হয় রাজনৈতিক ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা। এ ঘটনা ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে চিরবিদায় করতে চেয়েছিলেন তারেক জিয়া। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এরপর এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাজানো হয় একের পর এক নাটক।
তারেক জিয়া তার পিতার মতোই বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন। এ কারণেই তার পৃষ্ঠপোষকতায় উত্থান ঘটে বাংলা ভাইয়ের। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। পাকিস্তানের পরামর্শে এবং মদদে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া শুরু করে তারেক। এর বড় প্রমাণ ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনা। তারেকের সঙ্গে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্র-মৌলবাদী এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সখ্যের প্রমাণ উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিলে। সেসব দলিল ফাঁস করেছিল উইকিলিকস।
ক্ষমতায় চিরকাল থাকতে মরিয়া তারেক জিয়া সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেন। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেন দলীয় ক্যাডার। পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন সর্বত্র চলে তারেকের নিজস্ব বাহিনী গঠনের উৎসব। এ কারণেই সিনিয়র সাতজনকে ডিঙিয়ে জেনারেল মইন উ আহমেদকে করা হয় সেনাপ্রধান। ড. ইয়াজউদ্দিনের মতো একান্ত অনুগত, আজ্ঞাবহ, মেরুদন্ডহীনকে করা হয় রাষ্ট্রপতি। বিএনপির অধিকাংশ নেতা বিশ্বাস করেন, তারেক জিয়ার সীমাহীন দুর্নীতি, অপরিণামদর্শী ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই এক-এগারো আসে। আর তাই প্রয়াত সাইফুর রহমান, মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা, তরিকুল ইসলামের মতো পোড় খাওয়া নেতারা তারেকের ব্যাপারে এতটুকু সহানুভূতি দেখাননি। এখনো বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মী মনে করেন বেগম জিয়া ও বিএনপির আজকের পরিণতির জন্য তারেক জিয়াই একমাত্র দায়ী। বেগম জিয়া ছিলেন পুত্রের ব্যাপারে অন্ধ। ছেলের সব অপকর্মে তার সায় ছিল। বিএনপির বহু নেতাই বলেন, বেগম জিয়া যদি তারেককে ন্যূনতম শাসনে রাখতেন, তাহলে দলটি আজ এ দুরবস্থায় পড়ত না। এক-এগারোতে তারেক এবং তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন মামুন গ্রেফতার হন। বেগম জিয়ার কান্না এবং অনুরোধে মুচলেকায় বিশেষ বিবেচনায় মুক্ত হয় তারেক জিয়া। চলে যান লন্ডনে। যাওয়ার সময় কাগজে লিখিত এই মর্মে মুচলেকা দিয়েছিলেন যে, আর রাজনীতি করবেন না। ঠিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দুই কুলাঙ্গার দুর্বৃত্তের মতোই। কিন্তু বিশেষ প্রাণীর লেজের মতোই তারেক জিয়ার চরিত্রেও পরিবর্তন অসম্ভব। ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে তারেক জিয়া। এখনো সেই একই অপকর্ম করছেন যা তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত করেছেন। লন্ডনে বসেই চাঁদাবাজি করছেন, কমিটি বাণিজ্য করছেন। বিএনপিতে এখন এটা ওপেন সিক্রেট যে, টাকা ছাড়া ওয়ার্ড কমিটিতেও ঢোকা যায় না। বিএনপিতে যারা নির্যাতিত ত্যাগী তারা কোনো কমিটিতে জায়গা পান না। বিএনপির একেকটি কমিটি ঘোষণা একটি করে বিক্ষোভ এবং বিদ্রোহের জন্ম দেয়। কে কত টাকা দিয়ে কোন পদ পেয়েছেন, তা প্রকাশ্যে আলোচিত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। বিনা শর্তে ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তারেকের নির্দেশে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। দুষ্টু লোকেরা বলে, সে সময় তারেকের অর্থের দরকার ছিল। এ জন্যই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। ওই নির্বাচনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা শোনা যায়। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়নবঞ্চিতরা প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, কত টাকার মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে। প্রায় সব আসনেই দুই বা ততোধিক প্রার্থী দিয়ে কি একটি দল নির্বাচনে জয়ী হতে পারে
এখন বিএনপির যে আন্দোলন, তারও প্রধান লক্ষ্য চাঁদাবাজি, এমনটি মনে করেন অনেকে। এর কারণ ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালের অভিজ্ঞতা। এ সময় তারেকের নির্দেশে অগ্নিসন্ত্রাস, লুটতরাজ আর নাশকতা করেছিল দলটি। ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়েছিল সেই সময়ের সহিংস আন্দোলন। এবারও আন্দোলনের শুরুতেই বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ফোন করা শুরু হয়। ফোন করতেন তারেক জিয়া অথবা তার মনোনীত ব্যক্তি। তাদের ভয়ভীতি দেখানো হতো। বিএনপি ক্ষমতায় এলে, তাদের পরিণতি কী হবে, সে সম্পর্কেও ভীতিকর ভবিষ্যদ্বাণী করা হতো। অনেক ব্যবসায়ী চান দুই দিকেই সম্পর্ক রাখতে। হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ, তারেকের অন্যতম অর্থ জোগানদাতা অনেকেই এখন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। এরা ভীত হয়ে বা বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসতে পারে এমন ধারণা থেকেই তারেক জিয়াকে গোপনে টাকা পাঠাতে শুরু করে। সেই পাচারকৃত অর্থের ছিটেফোঁটা দিয়ে বিএনপি মহাসমাবেশের নামে বিভাগে বিভাগে খিচুড়ি উৎসব করে। তারেক জিয়ার এই চাঁদাবাজির মিশনের সহযোগী ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঁদাবাজ, প্রতারক হিসেবে খেতাব পাওয়া দুই দুর্বৃত্ত। এই একটি ছবি, চাঁদাবাজ চক্রের সঙ্গে তারেকের গোপন প্রণয় প্রকাশ করে দিয়েছে।
এ ছবিটি তারেক জিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহিতার এক প্রামাণিক দলিল। আবর্জনায় ঠাসা তথাকথিত চ্যানেলে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর অশ্লীল কথাবার্তা প্রচারিত হয়। তারেক জিয়া যেহেতু এই কুরুচি ভান্ডারের পৃষ্ঠপোষক, কাজেই তিনি যে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী এটা তার অকাট্য প্রমাণ। তার নির্দেশেই যে দেশের বিরুদ্ধে কিছু বিকৃত মানুষ কথা বলছে, তা এখন স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার। লন্ডনে পলাতক বিএনপির স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত। অর্থ পাচারের একটি মামলায় হাই কোর্ট তাকে সাত বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছেন। হাই কোর্টের এক আদেশ অনুযায়ী তারেক জিয়ার কোনো বক্তব্য বিবৃতি বাংলাদেশে প্রচার নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তারেক জিয়া পরোয়ানাভুক্ত দন্ডিত। মোস্ট ওয়ান্টেড। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও তারেক পরিচিত একজন মাফিয়া ডন বা গডফাদার হিসেবে। কেউ তাকে রাজনীতিবিদ মনে করেন না। কিন্তু আমরা প্রায়ই দেখি বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারেক জিয়া অনলাইনে যুক্ত হন। ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। এটি আদালত অবমাননার শামিল।
আমি মনে করি, অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মহামান্য আদালতের এ ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি তথাকথিত সাক্ষাৎকারের নামে মোস্ট ওয়ান্টেড তারেক জিয়ার সঙ্গে যে দুই দুর্বৃত্তের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাদের সব কনটেন্ট বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা দরকার। মহামান্য হাই কোর্ট একরকম বহু যুগান্তকারী প্রণোদিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে দ্রুত রাষ্ট্রবিরোধী এসব আবর্জনায় আকীর্ণ, কথার দুর্গন্ধযুক্ত বমিদূষণ বাংলাদেশে বন্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে মহামান্য বিচার বিভাগের আশু হস্তক্ষেপ জরুরি। না হলে এদের চরিত্র হননের খেলা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। পাশাপাশি দন্ডিত তারেক জিয়াকে অনতিবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য বিদেশের মিশনসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় সৎ এবং সাহসী মানুষকে বসাতে হবে। কারণ সরকারের ভিতর এখনো ঘাপটি মেরে আছে তারেক জিয়ার অনুচররা। যারা এখনো তারেক জিয়াকে ক্ষমতায় বসানোর খোয়াব দেখে। এরা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। এদের চিহ্নিত করার এখনই সময়।
শেয়ার করুন