নিজস্ব প্রতিবেদক:- হলুদ সাংবাদিকতাই ছিল তার মুল অস্ত্র, মানুষের চরিত্র হনন ছিল তার নিত্য দিনের পেশা। অত্যান্ত ঠান্ডা মাথায় করতেন চাদাঁবাজি। সেই চাদাঁবাজির টাকায় গড়ে তুলেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্টান।
এক সময়ে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো এই সাংবাদিকের আজ নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে ফ্লাটবাড়ী ও বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে আলীশান জীবন যাপন করছেন তিনি।
যাকে নিয়ে আজকের প্রতিবেদন তিনি আর কেউ নন তথাকথিত “বাংলাদেশ প্রতিদিন” সিলেট প্রতিনিধি ও “সিলেট ভিউ ২৪” নামে অনলাইন পোর্টালের প্রকাশক শাহ্ দিদার আলম নবেল।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, নবেল আওয়ামিলীগের শাসনানলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি সিলেট জেলা প্রেসক্লাবকে বানিয়ে ফেলেন আওয়ামিলীগের অফিস। শর্ত ছিল বিএনপি জামায়াতকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে সংবাদের মাধ্যমে সিলেটবাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে।
যেই কথা সেই কাজ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে দায়ীত্বে থেকে তিনি প্রতিদিনই জামায়াত-বিএনপির নামে ছড়িয়েছেন গুজব। “বাংলাদেশ প্রতিদিন” ও “সিলেট ভিউ ২৪” সহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদে বিএনপি জামায়াতকে কখনও বানিয়েছেন জঙ্গী আবার কখনও বানিয়েছেন সন্ত্রাসী সংগঠন।
বিনিময়ে পেয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ও আওয়ামিলীগ নেতাদের সাথে বিদেশ ভ্রমনসহ নানা সুবিদা। তাদের সাথে তোলা ছবি ব্যবহার করেও তিনি স্হানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে বানিয়েছেন বোকা।
সুত্র থেকে জানা যায়, এই নবেলের সিলেট জুড়ে রয়েছে বিশাল সম্পত্তি, রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা। সেই সাথে নগরীর কয়েকটি স্হানে রয়েছে “দুধওয়ালা” নামক তার নিজস্ব প্রতিষ্টান। এসব কিছু তিনি কামিয়েছেন কলমের জোর ও আওয়ামিলীগের দালালি করে।
তবে “দুধ ওয়ালা” প্রতিষ্ঠানের কোন কিছুতেই তিনি প্রকাশ্যে থাকেন না। তিনি শাকিল জামানের মাধ্যমে এ ব্যবসায় তার মোটা অংকের শেয়ার লাগিয়েছেন বলে “দুধওয়ালা” সুত্রে জানা গেছে।
যেভাবে হাতিয়ে নিতেন টাকা:- “সিলেট ভিউ ২৪” এর একজন সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্টানকে টার্গেট করে তৈরী করা হত সংবাদ। তাও প্রকাশের আগে মুঠোফোনে আলাপ হত অভিযুক্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাথে।
ধরদাম ঠিক হলে সে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্টানের সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করা হত। ঐ সুত্র জানায়, নবেলের ছিল “সিলেট ভিউ ২৪” এর কিছু নিজস্ব চাদাঁবাজ। এদের মাধ্যমে তিনি লেনদেনের কাজ করতেন। এদের শর্ত ছিল যেভাবেই হউক সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সদস্য বা কোন পদে রাখতে হবে।
নবেল খুবই চতুর ছিলেন, তিনি সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামিলীগ সমর্থিত সিলেটের সাবেক পুলিশ কমিশনার, সাবেক জেলা প্রশাসক, সাবেক মন্ত্রী এমপি, আওয়ামিলীগের নেতা, বড় বড় ব্যবসায়ীদের দাওয়াত দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। অথচ বিরোধী দলের কাউকে তিনি দাওয়াত দিতেন না।
সুত্র জানায়, এগুলো ছিল নবেলের চালাকি, তার বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে না পারে সে জন্য এসব ছিল তার বানানো নাটক। সে আওয়ায়িলীগের দালালি করে তার নামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালটিও করে নেয় নিবন্ধন। আওয়ামিলীগের সন্ত্রাসীদের পক্ষপাত করে হয়ে উঠেন সিলেটের মিডিয়া জগতের ভয়ংকর সাংবাদিক।
কে এই নবেল:- যতদূর জানা যায়, নবেল সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গণিপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের পুত্র। একবারে দারিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। যার ফলে তার ভাগ্যে কোন সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব হয়নি।
যার জীবন যাত্রা ছিল একেবারে সাদামাঠা আজ সে হঠাৎ করে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদিপ না পেয়েই বিলাস বহুল জীবন ও বিশাল অর্থবৃত্তের অধিকারী। এ নিয়ে সিলেট জুড়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন।
জনশ্রুতি রয়েছে, এই গুণধর সাংবাদীক নাকি দুধে ধোয়া তুলশি পাতা নন। তিনি মানুষের দূর্বলতাকে পুজিঁ করে সংবাদ পরিবেশনের ভয় ভীতি প্রদর্শন করে ফায়দা হাসিলে ওস্তাদ।
উনার চাহিদা মতো উৎকোচ না দিলে যে কারও চরিত্র নিয়ে কিংবা মান-সম্মানকে ধুলিসাত করতে উনার বিবেকে বাধে না। তাই উনি বিবেক প্রতিবন্ধি বলেও কু-খ্যাতি রয়েছে।
সিলেটের বাইরেও নবেলের চাদাঁবাজি:- নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, নবেল ঠান্ডা মাথার চাদাঁ বাজ। তার অত্যাচার শুধু সিলেট নগর জুড়ে নয়,, গুটা সিলেটে রয়েছে তার দৌরাত্ব।
নগরী ছাড়াও সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে তার সহযোগী চাদাঁবাজরা। এদের মাধ্যমে সে ফায়দা হাসিল করে। সিলেটের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ তার চাদাঁবাজীতে অতিষ্ট।
নবেল তার চাদাঁবাজির শক্তি হিসেবে ব্যবহার করেন বাংলাদেশ প্রতিদিন ও তার নিজের পোর্টাল সিলেট ভিউ টুয়েন্টি ফোর ডটকমকে। সেই সাথে ছিল আওয়ামিলীগের নেতারা।
সংবাদ মাধ্যমে নিজেই হন সংবাদ:- নবেল সাংবাদিকতার শুরুতেই ছিলেন বিতর্কিত সাংবাদিক, তিনি নিজে ২০১০ ও ২০১৪ সালে সংবাদ হয়েছিলেন। ঐ সময় প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তিনি সংবাদের শিরোনাম হন।
তার মধ্য উল্ল্যেখ যোগ্য ছিল সিলেটের চিহ্নিত ভূমি দস্যু ও দলিল জালিয়াত চক্রের মূল হোতা আনোয়ার খন্দকার ওরফে মামা খন্দকার চক্রের সাথে আর্থিক সম্পৃক্ততা এবং বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকের বিরুদ্ধে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে একটি মানববন্ধনের ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সাংবাদিক জানান, নবেল এক সময় তার স্ত্রী সংসার চালাতে হিমশিম খেত আজ সে কি করে এত টাকার মালিক হয়ে গেল?
খোজ নিয়ে জানা যায়, অনলাইন পোর্টাল সিলেট ভিউ টুয়েন্টি ফোর ডটকমে বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ রয়েছেন। এদের বেতন ভাতাসহ অফিসের বিশাল ব্যায়ভার বহনের আয়ের উৎস ছিল নবেলের চাঁদাবাজি।গত ১৭ বছর করেছেন আওয়ামিলীগের গোলামি:- নবেলের সাংবাদিকতা জীবনে রয়েছে নানা ইতিহাস। তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করতে পিছপা হতেন না। ২০১৮ সালে ভোট চুরির মাধ্যমে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসার পর তার প্রতারনার চরিত্র আরেকটু প্রসারিত করেন।
তিনি অফিসে বসে জামায়াত-বিএনপির নেতাদের তথ্য পুলিশের কাছে পৌছে দিতেন। তিনি আরো কয়েকজন আওয়ামিলীগের কথিত সাংবাদিককে জোগাড় করে গড়ে তোলেন বিএনপি জামায়াত বিরোধী সাংবাদিক চক্র।
এই চক্রের মুল হোতা ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামিলীগের হয়ে প্রকাশ্যে ছাত্রদের হত্যার হুমকি দাতা ও ২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের রাতের আধারে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো সেই তথাকথিত সাংবাদিক আল আজাদ। বর্তমানে আল-আজাদ কয়েকটি মামলার আসামী হয়ে পলাতক রয়েছেন।
জুলাই-আগষ্টের আম্দোলনে নবেল, আল-আজাদসহ নবেল অনুসারি বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের দায়ীত্ব ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার তথ্য পুলিশের নিকট পৌছানো।
সিলেটের সৎ ও বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকগন যেখানে সাদামাটা জীবনযাপন করতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে এই গুনধর সাংবাদিক প্রতিমাসে সিলেট ভিউ ২৪ ডট কমের সকল স্টাফ ও প্রতিনিধি নিয়ে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমন বিলাসে মত্ত থাকতেনন। তার এত অর্থবিত্ত ও প্রাচুর্যের মূল রহস্য কি তা আজ রহস্যেঘেরা।
সৌজন্যে ঃ প্রথম সকাল
শেয়ার করুন