ত্রাণ কাঁধে নিরন্ন মানুষের কাছে ছুটে চলা ও পানি বন্ধি মানুষকে উদ্ধারে বিলাল

সিলেট

মো: আব্দুল্লাহ,জৈন্তাপুর (সিলেট)প্রতিনিধি:

গত মাসেই এক দফা বন্যায় ভাসল সিলেটের নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো তখনো জৈন্তাপুরে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা আনসার ভিডিপির দলনেতা বিলাল হোসেন লিটন । এবারের আকস্মিক বন্যার সময়ও অসহায়ের পাশে ছিলেন তিনি। ত্রাণ কাঁধে নিজেই যাচ্ছেন নিরন্ন মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে এবং বন্যায় কবলিত মানুষের উদ্ধার কাজে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন তিনি । তাঁর গল্প জানেন জৈন্তাপুরের মানুষ।

সিলেটের আকাশ তখন ছেয়ে আছে জমাট কালো মেঘে। টানা বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ বন্যায় নাকাল মানুষজন। সকালে অফিসে যাওয়ার পথে জৈন্তাপুর এলাকার বন্যার পরিস্থিতি বিলাল নিজেই দেখেছেন। জৈন্তাপুরের পানি বন্ধি মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন, সে খবরও তাঁর জানা। জায়গায় জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। চারপাশে পানি অথচ খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। রাতে ডাকাত পড়ার মতো ভয়াবহ খবরও ফেসবুকে চাউর হয়েছিল। বৃষ্টি না থামলে, এভাবে বন্যার পানি বাড়লে মানুষের কী হবে? এই প্রশ্নে বিলালের মন যখন তোলপাড়, তখনই স্থানীয় দৈনিকের একটি প্রতিবেদনে দৃষ্টি আটকে যায়। তাতে বলা হয়েছে, ‘জৈন্তাপুরের কিছু এলাকায় পানি বন্ধি মানুষ বাড়ি থেকে বাহির হতে পারছে না নৌকার সংকট দেখা দিয়েছে। তখন পানি বন্ধি মানুষের বাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসার কোন ব্যবস্থা পাচ্ছে না।’ মনটা আরও ভার হয়ে যায়। তখনই তার সাথে সাথে রেইনকোট গায়ে চাপিয়ে বিলাল জৈন্তাপুর উপজেলা আনসার ভিডিপির কয়েক সদস্য নিয়ে তড়িঘড়ি ছুটে চলেন পানি বন্ধি মানুষ কে উদ্ধার করতে। তখন ছিল না কোন নৌকার ব্যবস্থা তখনই কোন কিছুর উপায় না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে বুকপানিতেও কাঁধে করে মানুষকে উদ্ধার করতে শুরু করেন জৈন্তাপুর উপজেলা আনসার ভিডিপির দলনেতা বিলালের টিম দিনরাত পরিশ্রম করে পানি বন্ধি মানুষকে উদ্ধার করতে কিছুটা হলেও সফল হয়েছেন তারা ।

দুর্গত মানুষের পাশে সবসময় দাঁড়িয়েছিলেন বিলাল।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা আনসার ভিডিপিতে চাকরি করেন এই বিলাল হোসেন লিটন । পেশায় আনসার ভিডিপির দলনেতা । সামান্য বেতনের চাকরি। তবে হৃদয়টা সামান্য নয়। অসহায় মানুষের জন্য সবসময় কিছুনা কিছু করার চেষ্টা করেন তিনি। বন্যা কালীন সময়ে প্রতিদিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যার্তদের ত্রাণ পৌঁছে দিত দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। উদ্ধার
পথেই খবর পেলেন, বন্যার পানি বিলালের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন। তারপরও বাড়িতে না ফিরে জৈন্তাপুর বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় গেলেন বিলাল । সেখানে দেখেন পানি থই থই। তীব্র স্রোত বইছে। মানুষগুলো অসহায় যেন। নারী ও শিশুদের স্কুল ভবনে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিতে ছুটে চলেন । একে একে পার করলেন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশুকে। তারপর বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা চেয়ে কিছু টাকায় চিড়া-গুড়ের প্যাকেট তুলে দিতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যার্তদের পাশে ছুটে চলেন বিলাল ।

মানুষ বড় অসহায়
১৮ জুন থেকে রোজই ত্রাণ বিতরণে যাচ্ছেন বিলাল। সিলেটে ভয়াবহ বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুকে অনেকেই বিলালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কারণ, বিলাল যে আপাদমস্তক স্বেচ্ছাসেবক, সে খবর জানেন অনেকেই। কেউ কেউ সহায়তাও করতে চান। সত্যিই সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষদের খুঁজে বের করেন বিলাল। শুরুতে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি, বিস্কুট, চিড়া, মুড়ি, গুড় দিতেন। তার পর দিয়েছেন এক সপ্তাহ চলার মতো খাদ্যসামগ্রী। বিলাল বলেন, ‘আমি অনেককে চিনি, যাঁদের ঘরে খাবার নেই। সহায়তা প্রয়োজন, কিন্তু কাউকে বলতে পারেন না। এমন মানুষদের কাছেই ত্রাণ পৌঁছে দিতে সফল হয়েছি ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *