দিরাই(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
ভ্রমণ বরাবরই স্মৃতিময়। তবে কোনো কোনো ভ্রমণের স্মৃতি একেবারেই আলাদা। দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি- ৯৮ ব্যাচের বন্ধুদের ভ্রমণের মজা আরো বেশি ব্যতিক্রম। তেমনই এক ভ্রমণের অন্যরকম স্মৃতি সম্পর্কে লিখেছেন দিরাই রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দিপংকর বনিক দিপু।
মেতে উঠি আনন্দে ফিরে যাই শৈশবে। এই মূলমন্ত্রকে সাথে নিয়ে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি-৯৮ ব্যাচের বন্ধুদের এক মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এসএসসি’র দীর্ঘ ২৫ বছর পর বন্ধুরা রজতজয়ন্তী ও বনভোজন পালন করেছেন।
ব্যস্তময় জীবনে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা আজকাল তেমন হয়েই ওঠে না। ঠিক সেই কথা মাথায় রেখে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে যাতে একে অপরের দেখা হয়, সেই লক্ষ্যে বন্ধুপূর্ণমিলনি মিলনমেলা যাত্রা শুরু করেন ২০১৪ সালে। দিরাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী হলে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মাসুক উদ্দিন স্যারের বিদায়ী সংবর্ধনার মাধ্যমে ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বারের মত মিলনমেলা আয়োজন করেন এসএসসি- ৯৮ ব্যাচের বন্ধুরা। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ হোয়াটস্যাপের মাধ্যমে সে সুযোগ সৃষ্টি করে দেন এই ১৯৯৮ ব্যাচের কয়েকজন বন্ধু। সেই দ্বারাকে অব্যাহত রাখতে তৃতীয় বারের মত গত ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দিরাইস্থ গ্রীনল্যান্ড সিটিতে পিকনিক স্পটে মিলনমেলা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সত্যিকারের বন্ধু আর ছায়ার মাঝে অনেকটাই মিল আছে। কারণ, সত্যিকারের বন্ধু সুখে-দুখে ছায়ার মতোই পাশে থাকে। চতুর্থ বার ২০২৩ সালে এসে ২৪ ফেব্রুয়ারি এসএসসি-৯৮ ব্যাচের দীর্ঘ ২৫ বছর পর এক সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সিলেটের জৈন্তার লালাখাল নান্দনিক পিকনিক স্পটে আবারও সেই মিলনমেলার আয়োজন করেছেন দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐ ব্যাচের বন্ধুরা। এমন বন্ধুত্বের বন্ধন আরো শক্ত করে বেঁধে রাখতে সুদূর প্রবাসে থাকা কয়েকজন বন্ধুদেরকেও দেখা যায়। এই অনুপ্রাণিত মিলনমেলায় অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেসময় মহান সৃষ্টি কর্তা নিকট প্রার্থনা বন্ধুত্বের বন্ধন যেন জন্মজন্মান্তরের অঠোট থাকে প্রত্তয় ব্যক্ত করেন তারা।
দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকা বন্ধুরা একে অপরকে পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। খোঁজ নেন পরিবার-পরিজনের। অনেকের চেহারা চেনা চেনা লাগলেও পরিচয় জেনেই নিশ্চিত হই তিনিই সেই স্কুল জীবনের বন্ধু। এভাবে জৈন্তার লালাখাল পিকনিক স্পটটি যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। যেখানে এই সাবেক শিক্ষার্থীরা শৈশবের উৎসবে মেতে ওঠেন।
এই দীর্ঘ ২৫ বছরে এসএসসি-১৯৯৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিভিন্নজন নানা পেশায় চলে গেছেন। এদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিক্ষক, কেউ জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক অফিসার, কেউ জনপ্রতিনিধি, কেউবা আবার ব্যবসায়ী। কেউ-কেউ আবার প্রবাসী। কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধনে একসঙ্গে মেতে উঠি আনন্দে ফিরে যাই শৈশবে। এ শ্লোগানে সবাই যেন এ দিন একাকার হয়ে যান। পরিচয় সবার যেন একটা সেটা হলো আমরা স্কুলজীবনের বন্ধু।
এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটের সময় থানা রোডস্থ দিরাই সরকারি উচ্চ বালিকা সামনে একে একে সবাই আসতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে নীরব সকালের মুখরিত হয় মিলনমেলায়।
উৎসব মুখর পরিবেশ নিয়েই আমরা গাড়িতে উঠে পরি। প্রায় ২৬কিলোমিটার পথ অতিক্রমের সকালের চা-নাস্তা করি দিরাই রাস্তা মুখে অর্থাৎ মদনপুর টার্মিনালে।নাস্তা শেরে আবাও গাড়িতে উঠে ১২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কাঙ্খিত স্বপ্নের জৈন্তার লালাখাল পিকনিক স্পটে গিয়ে পৌঁছাই জুম্মা নামাজের কিছু আগে। যেহেতু জুম্মাবার অনেকেই নামাজ আদায় করবেন সেহেতু নামাজের বিরতি নেওয়া হয়। নামাজের পর আবারও মিলিত হন তারা।
সেদিনের আনন্দ ছিলো জীবনের অন্যান্য ভ্রমণের আনন্দের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। দুপুরের খাবারের পর কিছুক্ষণ চললো আনন্দ আড্ডা। আড্ডা দিতে-দিতে প্রায় ১৫ মিনিট পর সবাই এক হয়ে যাত্রা শুরু করে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানির দিকে। জৈন্তার লালাখাল এর মূল পিকনিক স্পটের থেকে যতদূর চোখ যায় যেন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ লালাখালকে করেছে আকর্ষণীয়, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল আর পাহাড়ে যেন অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য। সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক সৌন্দর্যের ক্যানভাস।
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে স্তরে স্তরে সাজানো সবুজ গাছপালা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ এবং ডাউকি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবিরাম প্রবহমান জলপ্রপাত দেখলেই মন ভরে যায়। লালাখাল জিরো পয়েন্ট থেকে মায়াবী ঝরনায় নৌকায় যেতে ৪৫ মিনিটের আনন্দ আরও দ্বিগুণ। সর্বোপরি এক এক করে সব জায়গা ঘুরে দেখি আমরা। হাসি-আনন্দে সারাক্ষণ অতিবাহিত হয় আমাদের এ যাত্রা। ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে তোলা হয় নানা ভঙ্গিমায় স্থিরচিত্র। দেখতে দেখতে চলে যায় অনেকটা সময়। স্মৃতির পাতায় স্মৃতিময় হয়ে থাকবে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি-১৯৯৮ ব্যাচের বন্ধুদের ভ্রমণের মজা স্মৃতিময় হয়ে থাকবে ‘প্রকৃতিকন্যা’ নামের খ্যাত লালাখাল পিকনিক স্পটি।