সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটি ছিল ভারুন চক্রবর্তিকে নিয়ে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করা রহস্য স্পিনারকে সামলাতে কতটা প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া দল। স্টিভেন স্মিথ মনে করিয়ে দিলেন, ভারুন তো ভারতের চতুর্থ স্পিনার। অন্য তিন স্পিনারও তো দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অকপটেই বললেন, ভারতের স্পিন সামলাতে পারলে তারা জিতবেন, না পারলে অপেক্ষায় পরাজয়।
রোহিত শার্মার সংবাদ সম্মেলনের অনেকটা জুড়েও ছিল স্পিন। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের মতো সেমি-ফাইনালেও তারা স্পিনার নিয়ে নামবেন কি না, সরাসরি উত্তর দেননি ভারতীয় অধিনায়ক। তবে আভাস দিয়ে রেখেছেন এমনটিই।
সব মিলিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম সেমি-ফাইনালের আবহ সঙ্গীত হয়ে বাজছে স্পিন। দুবাইয়ের স্পিন-আঙিনায় ফাইনালে ওঠার এই মহারণ শুরু মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায়।
দুই দল ওয়ানডেতে সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল যে ম্যাচে, সেটি গত কয়েক বছরের মধ্যে স্মরণীয় ম্যাচগুলির একটি। ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে আহমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ান পেশাদারিত্বের রথে পিষ্ট হয়েছিল ভারতীয় দল ও দর্শকদের আবেগ ও আশা।
সেই ফাইনালের আগের দিন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেছিলেন, মাঠের ১ লাখ দর্শককে চুপ করিয়ে দেওয়ার আনন্দ পেতে চান তারা। মাঠে ঠিকই তা করে দেখিয়েছিল তার দল। এবার চোটের কারণে কামিন্স নেই। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা মোটে ২৫ হাজার। সেখানে বেশির ভাগ দর্শকই অবশ্য নিশ্চিতভাবেই থাকবেন ভারতীয়।
তবে এবার তাদের চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো বার্তা দিতে চান না এই টুর্নামেন্টের অধিনায়ক স্মিথ। দুবাইয়েই সব ম্যাচ খেলায় এখানকার উইকেট-কন্ডিশনে ভারতের অভ্যস্ততা ও বাড়তি সুবিধা নিয়ে তোলপাড় চলছে আসরজুড়েই। সেখানেও খুব একটা অভিযোগ নেই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের।
“সত্যি বলতে, (দর্শককের জন্য) আমার তেমন কোনো বার্তা নেই। আমাদের আশা থাকবে স্রেফ মাঠে নামা ও সম্ভব হলে, ভালো প্রদর্শনী মেলে ধরা।”

“ভারতের সুবিধার কথা বললে… জানি না, ঠিক নিশ্চিত নই আসলে। হ্যাঁ, অবশ্যই তারা সব ম্যাচ এখানে খেলেছে এবং উইকেটের আচরণ সম্পর্কে ধারণা আছে। কিউরেটরের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। বেশ শুষ্ক উইকেট সবকটিই, অনেক খেলা হয়েছে। আমরা দেখেছি উইকেটের আচরণ কেমন। ভারত তাদের সব ম্যাচ এখানে খেলেছে। তবে আশা করি, ভালো একটি লড়াই হবে। আমরা মুখিয়ে আছি চ্যালেঞ্জের জন্য।”
স্মিথের কণ্ঠে অস্ট্রেলিয়ান পেশাদারিত্বের সুর। কোনো চ্যালেঞ্জেই তারা ভড়কে যান না। এই টুর্নামেন্টেই যেমন, অধিনায়ক কামিন্স ছাড়াও জশ হেইজেলউড ও মিচেল স্টার্ক, বোলিং আক্রমণের তিন প্রধান অস্ত্রকে ছাড়া খেলছে তারা। চোটের কারণে নেই অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ ও ক্যামেরন গ্রিনও, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আচমকা অবসরে চলে গেছেন মার্কাস স্টয়নিস। তার পরও তারা উঠে গেছে সেমি-ফাইনালে। এই লড়াইয়ের আগে তারা হারিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার ম্যাথু শর্টকে।
তার পরও স্মিথ প্রত্যয়ী। ভারুনকে নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক বললেন, ভারতের স্পিন চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে চান তারা।
“শুধু (ভারুন) চক্রবর্তি নয়, ওদের বাকি স্পিনাররাও মানসম্পন্ন। আমাদের জন্য খেলায় জয়-হারের ফয়সালা হবে, আমরা স্পিন কীভাবে খেলতে পারছি। বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলো আমরা কীভাবে পার করতে পারি।”
“অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। (উইকেট) দেখে মনে হচ্ছে, বেশ স্পিন ধরবে এখানে। সেটির পাল্টা জবাব আমাদের দিতে হবে। দেখি আমরা কালকে কেমন করতে পারি। আমাদের বেশ কিছু বিকল্প আছে, দেখব কালকে কী করা যায়।”
পাকিস্তানের ম্যাচগুলিতে একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পাকে নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেমি-ফাইনালে দুই স্পিনার খেলানোর ভাবনা থাকবে, জানালেন স্মিথ। স্কোয়াডে আছেন লেগ স্পিনার তানভির স্যাঙ্ঘা ও শর্টের বদলে জায়গা পাওয়া কুপার কনোলি। জ্যাম্পা যেহেতু লেগ স্পিনার, আরেক স্পিনার খেলালে তাই লেগ স্পিনার তানভিরের চেয়ে বাঁহাতি স্পিনার কনোলির সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। স্মিথ অবশ্য ম্যাক্সওয়েলকে পার্ট-টাইম স্পিনারের চেয়ে বেশিই মনে করেন। ট্রাভিস হেড, মার্নাস লাবুশেনের স্পিনেও ভরসা রাখছেন তিনি।
রোহিতের সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটিই ছিল চার স্পিনার খেলানো নিয়ে। গ্রুপে প্রথম দুই ম্যাচে তিন স্পিনার নিয়ে খেলেছে তারা। শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ স্পিনার হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ভারুনকে। তিনিই শিকার করেন ৫ উইকেট। সেমিতেও তাকে দেখা যেতে পারে, ইঙ্গিত মিলল ভারতীয় অধিনায়কের কথায়।
“আমরা যদি চার স্পিনার খেলাতে চাই, ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে কীভাবে চারজনকে একাদশে জায়গা দেব। যদি না খেলাই, তাহলে কথাই নেই। বোলিং সমন্বয়ে যেটি কাজ করবে বলে আমরা মনে করি, সেটিই করার চেষ্টা করব। আমরা জানি এখানকার কন্ডিশনে কোনটি কাজ করবে, কোনটি করবে না। প্রতিটি দিন হিসেবে চিন্তা করি আমরা এবং সঠিক সমন্বয় নিয়ে নামার চেষ্টা করব। তবে অবশ্যই এটা (চার স্পিনার খেলানো) প্রলুব্ধ করছে।”

“সে (ভারুন) দেখিয়েছে নিজের সামর্থ্য। একটি ম্যাচ খেলেছে এবং তাকে যা করতে বলা হয়, সবই করেছে। সে যখন সব ঠিকঠাক করে, এরকমই ৫ উইকেট নিয়ে নেয়। এখন আমাদের দায়িত্ব সঠিক সমন্বয় দাঁড় করানোর। এটা একটা সমস্যা বটে, তবে মধুর সমস্যা। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইন আপ কেমন হবে সেটা ধরে নিয়ে আমরা চিন্তা করব, তাদের বিপক্ষে কোন ধরনের বোলিং ভারসাম্য কার্যকর হতে পারে।”
স্পিনার শেষ পর্যন্ত তিনজন হোক বা চারজন, সেমি-ফাইনালে ভারত নামছে ফেভারিট হিসেবে। ব্যাটে-বলে শক্তি-সামর্থ্য, স্পিন আক্রমণ ও স্পিন সামলানো, উইকেট ও কন্ডিশনে অভ্যস্ততা, সবকিছুতেই তারা এগিয়ে। তবে আইসিসি টুর্নামেন্ট ও নকআউট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এই ধরনের চ্যালেঞ্জই তাদের সেরাটা বের করে আনে।
রোহিতও সেই সমীহ করছেন স্মিথের দলকে নিয়ে।
“প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা সবসময়ই দুর্দান্ত। আমরা এতদিন গ্রুপের তিন ম্যাচ নিয়ে ভেবেছি। এখন সেমি-ফাইনাল নিয়েও একই মনোযোগ দিতে হবে। বছরের পর বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়া দারুণ এক দল। তাদের কাছে থেকে শক্ত লড়াই তাই আমরা আশা করছি। মাঠে স্নায়ুর পরীক্ষা হবে বলেও ধারণা করছি আমরা। তবে খেলাটা এখন এরকমই, বিশেষ করে সেমি-ফাইনাল ম্যাচে। দুই দলই জেতার জন্য চাপে থাকবে।”