দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। আর লোকসানের শঙ্কায় সাগরে ট্রলার নামাতে রাজি হচ্ছেন না ট্রলার মালিকরা। অনেকেই লোকসান আর সইতে না পেরে বিক্রি করে দিচ্ছে ট্রলার। তবে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়েছে ট্রলার ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
বাঁকখালী নদীর মোহনা; দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নদীতে নোঙর করা শত শত মাছ ধরার ট্রলার। গেল কয়েকদিন ধরে এই নদীতে নোঙর করেছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ট্রলার। নদীর পাশে দোকানগুলোতে বেকার সময় পার করছেন জেলেরা। অনেকেই বসে বসে মোবাইলে দেখছেন আবহাওয়ার বার্তা। তবে সবাই রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
৬ নম্বর ঘাটে অবস্থান করা জেলে মো. রশিদ বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সপ্তাহখানেক মাছের দেখা পেয়েছিলাম। কিন্তু এরপর তীব্র গরমে আর মাছের দেখা পায়নি। এখন আবার গেল কয়েকদিন ধরে বৈরী আবহাওয়া। এখন কোথায় যাবে, একদিকে বৈরী আবহাওয়া আর অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছি।
অন্য এক জেলে তুহিন বলেন, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতের কারণে এক সপ্তাহ ধরে ঘাটে বসে আছি। এখন হাতে টাকাও নেই। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। সাগরে মাছ শিকারে যেতে না পারলে তো ট্রলার মালিক টাকা দেয় না।
ইলিয়াছ নামের আরেক জেলে বলেন, মুখে কীভাবে হাসি থাকবে বলেন; গত ৮ দিন ধরে ১৫ মাঝিমাল্লা নিয়ে ঘাটে বসে আছি। এখন সংসার চলছে না। ট্রলার মালিকও টাকা দিচ্ছে না। তাই আমাদের দুশ্চিন্তা যেন পিছুই ছাড়ছে না। সাগরে এখন ইলিশ নেই। তেলের দামও অতিরিক্ত। ১০ থেকে ১২ দিনের প্রতি ট্রিপে একটি ট্রলারের লাগে দুই থেকে আড়াই হাজার লিটার ডিজেল। তেলের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে অনেক। এত দাম দিয়ে তেল কিনে সাগরে ট্রলার নামাতে ভয় পাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।
শহরের নুনিয়ারছড়ার ট্রলার মালিক সৈয়দ হোসেন বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ৩টি ট্রলার সাগরে নেমেছিল। তখন প্রতিটি ট্রলারে খরচ হয় তিন লাখ টাকা করে। মাছ বিক্রি করে ২টি ট্রলার খরচ ওঠাতে পারলেও অপর ১টি ট্রলারে লোকসান গুনতে হয়েছে। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সাগরে ট্রলার নামিয়ে লাভ নেই।
অন্য এক ট্রলার মালিক জয়নাল বলেন, মাঝিমাল্লাসহ একটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে ৩ লাখ খরচ হয়। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে প্রতিটি ট্রলারে খরচ হবে ৪ লাখ টাকা। তাই ৩টি ট্রলারের মধ্যে আপাতত ১টি ট্রলার বিক্রি করে দিয়েছি। যদি বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ার পর ট্রলার সাগরে গিয়ে যদি মাছ না পায় তখন বাকি ২টিও বিক্রি করার চিন্তা ভাবনা করছি। কারণ আর লোকসান গুনতে পারছি না।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এরই মধ্যে কক্সবাজার উপকূলে নোঙর করেছে ৫ হাজারের বেশি ট্রলার। তবে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর দাবি জানালেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সদস্য মো. ওসমান গণি টুলু বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁকখালী নদীর উপকূলে এরই মধ্যে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ট্রলার নোঙর করা রয়েছে। অনেক ট্রলার মালিক এখন চিন্তা সাগরে ট্রলার না পাঠানোর।
কক্সবাজারে নিবন্ধিত নৌযান রয়েছে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। আর লক্ষাধিক জেলে থাকলেও নিবন্ধনের আওতায় এসেছে প্রায় ৬৩ হাজার জেলে।