“দেয়ালবন্দী”জালালাবাদ পার্ক নিয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ

সিলেট

সামনে ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়িঘর। মহানগরীর একমাত্র ‘জালালাবাদ পার্ক’ নামের ছোট্ট এই উদ্যানকে শিশুপার্ক করার জন্য বছর পাঁচেক আগে চারদিকে তোলা হয় উঁচু দেয়াল। কিন্তু শিশুপার্ক নির্মাণ না করেই দেয়ালবদ্ধ করা হয়। ফলে উদ্যানটি হারিয়েছে তার স্বাভাবিক পরিবেশ। বর্তমানে করোনার অজুহাতে বন্ধ আছে এটি। অভিযোগ আছে, উদ্যানটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থলে। এতো কিছুর পরও ‘দেয়ালবন্দী’ এ পার্ক নিয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ!

জানা গেছে, ৯৪ শতক জায়গায় গড়ে ওঠা এ উদ্যান ২০০৫ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন জালালাবাদ পার্কের স্থলে ১৬তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিবাদ ও নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ থেকে সরে আসে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। পরে জনদাবিতে ২০১০ সালে সংস্কার করে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। পার্কটিতে রয়েছে কৃত্তিম লেকের ফোয়ারা, ফুলের গাছ, ছায়াবৃক্ষ ও শানবাঁধানো বসার স্থান।

সবকিছু খোলা থাকলেও করোনার দোহাই দিয়ে এখনোও বন্ধ রয়েছে পার্ক। নষ্ট হয়ে গেছে পার্কের ভেতরে থাকা বাল্ব। সন্ধ্যা হলে পুরো পার্ক হয়ে যায় অন্ধকার। এই সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। রাতের আঁধারে চলে বিভিন্ন রকমের অপরাধজনক কাজ। উন্মুক্ত পার্কটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন  গেইট থেকে ফিরে যেতে হয় দর্শনার্থী ও সাধারণ মানুষকে। একমাত্র উন্মুক্ত পার্কটি বন্ধ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পার্কের সামন রয়েছে হকারদের দখলে।  ভেতরের দিকে গেইটে তালা ঝুলছে। বসার স্থানগুলোতে গাছের পাতা ও শেওলা পরিস্কার করছেন এক যুবক। তিনি পার্কের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় জেনে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এসময় পার্কটির কিছু অংশ ঘুরে দেখা গেছে ভেতরে থাকা অনেক বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে, কিছু গাছও ভেঙ্গে পড়েছে। সীমানা দেয়ালের পাশে নর্দমায় বেশ কয়েকটি ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে আছে।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন দোকানি নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সার্কিট হাউসের দেয়াল ঘেষা জালালাবাদ পার্কের চারদিকে উঁচু সীমানা প্রাচীর ঘেরা থাকার সুবাদে ভিতরে এক শ্রেণির উঠতি বয়সী যুবকরা প্রবেশ করে সমকামিতার মতো জঘন্য কাজের সাথে লিপ্ত হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভাসমান পতিতাদের আগমন ঘটে এখানে। সুযোগ বুঝে দেয়াল টপকে বা দেয়ালের নিছে ভাঙা রেলিং দিয়ে প্রবেশ করে। অনেক সময় এসব কাজ করতে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন টাকা, মুঠোফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। শুধু যে পতিতাবৃত্তি ঘটছে তা নয়, মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে উঠছে নগরের একমাত্র উদ্যানটি।

সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এমনিতে নগরীতে হাঁটা-চলার জন্য নেই কোনো ফাঁকা স্থান। তার মধ্যে করোনাকালে মানুষ ঘরে থাকতে থাকতে মানসিক বিভিন্ন সমস্যা ভোগছে। বিকেল বেলা একটু হাঁটা-চলা ও বসার জন্য একটি স্থান ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া এখানে সন্ধ্যার পর ভয়ানক অবস্থা দেখা যায়। চারদিকে অন্ধকার থাকে। আমি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি পার্কটি আবার খুলে দেওয়া হোক দ্রুত। সেই সাথে নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে পার্কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। খুলে দিলে প্রায় সময় দেখা গেছে হকাররা তাদের মালামাল নিয়ে পার্কের মধ্যে প্রবেশ করে। সেখানে মালামাল রেখে দেয়। এখানে দুজন কর্মচারী কাজ করেন। তার মধ্যে বীরমুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। নাম মোকাদ্দেস আলী। বয়স হওয়ায় অনেক সময় অনেক কিছু তিনি বলতে পারেননা।’

সবকিছু খোলা রয়েছে তাহলে উন্মুক্ত পার্কটি বন্ধ রয়েছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে নূর আজিজ বলেন, ‘এটা মেয়র মহোদয় ভালো বলতে পারবেন। আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *