দোয়ারাবাজারে কর্তৃপক্ষের ভুলে দাখিল পরিক্ষার্থী বহিস্কার ও জরিমানা আদায়

সুনামগঞ্জ

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি :

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে দাখিল পরিক্ষার্থী রুহুল আমিনের রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে গরমিল থাকায় পরিক্ষার ৪র্থ দিনে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এসময় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে সহকারী কমিশনার( ভূমি) ফয়সাল আহমেদ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অসদুপায় অবলম্বন করায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন ওই পরীক্ষার্থীকে।
রবিবার (৭ মে) বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধিনে চলমান দাখিল পরিক্ষার ৪র্থ দিনে দাখিল পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে ওই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি ইসলামপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র। ঘটনাসুত্রে জানা যায়, মাস তিনেক আগে দাখিল পরিক্ষার ফরম পূরণ করেছিল উপজেলার ইসলামপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র রুহুল আমিন। তার বাড়ী উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া গ্রামের। ফরম পূরণের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করে। এরপর পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন রুহুল আমিন। চলমান দাখিল পরিক্ষায় চারটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
রবিবার গণিত পরিক্ষা চলাকালীন ২ঘন্টা পর কেন্দ্রের সচিব কালিম উল্লাহ খাতাপত্রসহ রুহুল আমিনকে অফিসে নিয়ে আসেন এবং রোল দোয়ারাবাজার নং২৯৩৯৬১ এর রেজিষ্ট্রেশন কার্ডসহ সকল কাগজপত্র গরমিল থাকার কারণ দেখিয়ে তার স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করা হয়।জানা যায়, রুহুল আমীন নামে অত্র প্রতিষ্ঠানে দুইজন ছাত্র। দুজনের মধ্যে রুহুল আমীন, পিতা- ইউনুস আলী
,সৌদি আরবে চলে যায় কিন্তু তার রেজিষ্ট্রেশন হয়। অপরদিকে রুহুল আমীন, পিতা- আব্দুল ওয়াহাব
সে রেজিষ্ট্রেশন ফিসসহ যাবতীয় খরচ বহন করার পরও তার রেজিষ্ট্রেশন হয় নি কিন্তু সে এডমিট কার্ড পায় এবং সে ইতিমধ্যে পরীক্ষা দিতেছে।পরে রুহুল আমিন জানতে পারেন তার ফরমই পূরণ করেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তার বদলে ভুল করে দুইবছর আগে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়া রুহুল আমিন নামে আরেক ছাত্রের ফরম পূরণ করেছিলেন তারা। প্রথমে বিশ্বাস না হলেও পরে বিষয়টি নিশ্চিত হলে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ১০ বছর লেখাপড়া করে নিজের কেরিয়ার গড়ার সপ্ন দেখছিলেন প্রত্যন্ত অন্চলের ওই ছাত্র। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ভুলে তার সে স্বপ্ন ধূলিস্মাত হল। এখন বহিষ্কার ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করায় মানসিক ভাবে ভেঙে তিনি।
রুহুল আমিন বলেন, আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ইসলাম দাখিল মাদ্রাসার সুপার এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, রুহুল আমিন নামের দুই ছাত্র থাকায় অনিচ্ছাকৃত ভুল করে বিদেশে থাকা রুহুল আমিনের ফরম পূরণ হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও প্রবেশপত্র সংশোধন করতে না পেরে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সহানুভূতিতে তাকে পরিক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষমা চাচ্ছি।
মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান জসিম আহমেদ চৌধুরী রানা বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি, মাদ্রাসার সুপার ও অফিস সহায়কের ভুলের কারণে একটা ছাত্রের জীবন নষ্ট হবে, তা মেনে নেয়া যায় না। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

কেন্দ্র সচিব কালিম উল্লাহ বলেন প্রবেশপ্রত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের গরমিল থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে,চারটি পরিক্ষায় কিভাবে অংশ গ্রহণ করলো তার সদুত্তর দিতে পারেননি সচিব। চারদিন ওই হলে পরিক্ষার দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও আরিফ মোর্শেদ মিশু বলেন, একদিকে ওই পরীক্ষার্থীর ছবি ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডে গরমিল, অপরদিকে অন্যের বদলে প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নগদ ২০ হাজার টাকা জরিমানা সহ তাকে বহিষ্কার করা হয়। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *