চলতি বছরের আগস্টে শ্রমিক কর্মবিরতি ও মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ধকল কাঁটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের চা শিল্প। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে সেপ্টেম্বর মাসে ১৪.৭৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা অতীতের যেকোনো মাসের উৎপাদন রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত সেপ্টেম্বরের (২০২১ সাল) তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে প্রায় ১৭ শতাংশ চা উৎপাদন বেশি হয়েছে। এর আগে মাসভিত্তিক উৎপাদনের সর্বশেষ রেকর্ড হয়েছিল গত বছরের অক্টোবর মাসে। গত অক্টোবরে ১৪.৫৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ বছর আগস্ট মাসে শ্রমিক কর্মবিরতির কারণে উৎপাদন কিছুদিন বন্ধ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। বাগানের স্বাভাবিক কার্যক্রম দ্রুত শুরু হয়। এছাড়াও প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত, সঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, চা রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা, নিয়মিত বাগান মনিটরিং, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমকল্যাণ নিশ্চিতকরণের ফলে এ বছর চায়ের উৎপাদন অনেক ভালো। সেপ্টেম্বর মাসে রেকর্ড উৎপাদন চা শিল্পের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ঘটনা।
সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বাগান মালিক, চা ব্যবসায়ী ও চা শ্রমিকদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে চা শিল্পের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) দেশের ১৬৭টি বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানে ৬৩.৮৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা গত আগস্ট মাসে টানা ১৯ দিন আন্দোলন করেছেন। ৮ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে গত ২২ আগস্ট শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরলেও আরেক অংশ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন। চা শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটে সারাদেশের বাগান থেকে চা-পাতা উত্তোলন, কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন বন্ধ থাকে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের চা শিল্প। এ অবস্থায় গত ২৭ আগস্ট শনিবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি আনুপাতিক হারে তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে। সবমিলিয়ে দৈনিক মজুরি হবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ২৮ আগস্ট থেকে সিলেট বিভাগের সকল বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন।
পরে ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জসহ দেশের চা বাগানগুলোর শ্রমিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সঞ্চলনায় ভার্চুয়াল সভায় শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমার বাবা চা বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। তৎকালীন সময়ে চা শ্রমিকদের স্বার্থ চিন্তা করে তাদের জন্য যা যা করা দরকার সব করেছেন। তাঁর মতো আমিও আপনাদের জন্য যা যা করা দরকার সব করবো। চা শ্রমিকদের উন্নয়নে সব করতে প্রস্তুত রয়েছে সরকার।
শেয়ার করুন