আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ১৪টি দলের সঙ্গে প্রথম পর্বের সংলাপ শেষ করেছে দলটি। অন্যান্য আরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে তারা।
তবে বিএনপির এ সংলাপে অংশ নিতে আগ্রহী নয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। এসব দলের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী নির্বাচনের এখনও দেড় বছরের বেশি সময় বাকি আছে। এই মুহূর্তে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপে বা মতবিনিময়ে অংশ নিলে নানামুখী ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। তাছাড়া অন্য কোনো দল বা জোটে না গিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা সমঝোতায় আসা যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা চলছে দলগুলোর মধ্যে।
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, গত বছর হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তাদের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। যারা এখনো মুক্তি পাননি। সরকারের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেও তাদের মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন যদি সরকারের প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে নতুন করে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাহলে দমন-পীড়ন আরও বাড়তে পারে।
এ কারণে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপে অংশ না নেওয়ার একরকম নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে এসব দল। যদিও ধর্মভিত্তিক এসব দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো সংলাপের আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। আমন্ত্রণ পেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় একজন নেতা বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ তাদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিলে সরকারের রোষানলে পড়তে হবে।
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের রাজনীতিতে বর্তমানে ভালো অবস্থানে আছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখ বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করার বিষয়ে আমাদের দলীয় ফোরামে এখনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। তাছাড়া তাদের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমন্ত্রণ পাইনি। আসলে এ বিষয়ে আমরা ভাবিনি। এ মুহূর্তে আমরা নিজের দলের সাংগঠনিক বিষয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নেতারা সফর করেছেন। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
আমন্ত্রণ পেলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনই আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি না। আসলে যারা ইসলামি দল তাদের নিজেদের মধ্যে একটা সমন্বয় কিংবা সমঝোতা গড়ে উঠুক এটাই চাই আমরা। এটা ইসলামের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো হবে। অন্য কোনো জোট বা বিকল্প কিছু আমরা চিন্তা করছি না।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব এম এ মতিন বলেন, এখনো তাদের (বিএনপি) পক্ষ থেকে আমরা আমন্ত্রণ পাইনি। তারা আমন্ত্রণ দিতে আসলে তাদের কথা আমরা শুনব। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমরা নিজ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করব না।
মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস দীর্ঘ সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। কিন্তু নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১ অক্টোবর জোট ছাড়ে দলটি। দলটির আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আমরা এখন স্বাধীন দল। স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে চাই। বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপে আমরা অংশ নেব না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খেলাফত মজলিসের এক নেতা বলেন, কোন পরিস্থিতিতে আমরা ২০ দলীয় জোট ছেড়েছি নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে। সেই পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান। ফলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নতুন করে কোনো বিপদে পড়তে চাই না।
বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রথম পর্বে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ তাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে তারা সরকারের কিছুটা চাপে আছেন। তাই এখনই বিএনপির সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী নন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের প্রথম পর্বের সংলাপ শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় পর্বের সংলাপ শুরু হবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বলেন, আলোচনা হচ্ছে সব দলের সঙ্গে। সংলাপ হলে আপনারা দেখতে পাবেন।
শেয়ার করুন