গতকাল (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদের পদত্যাগ চেয়ে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা দাবি করেন, এক ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগরের পক্ষ নিয়েছেন তিনি। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন অধ্যাপক ওয়াহিদ।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিভাগের সভাপতি ও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানতে পারি যে, বিভাগীয় শিক্ষক জনাব সাদিকুল ইসলামের বিরূদ্ধে আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিচারের দাবিতে বিভাগীয় শিক্ষক জনাব মোর্শেদুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক বিভাগে তালা লাগিয়ে দেন এবং প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়ান। পরে জনাব মোর্শেদুল ইসলাম ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়টি অবগত করেন এবং সকলে মিলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
প্রশাসনিক ভবনের সামনে বক্তৃতায় সহকর্মী জনাব মোর্শেদুল ইসলাম ও জনাব জুলফিকার আহমদসহ কয়েকজন ছাত্র জনাব সাদিকুল ইসলামের পক্ষ অবলম্বন করায় আমার ও পুরো সিন্ডিকেটের পদত্যাগ চান। উল্লেখ্য যে, মাননীয় উপাচার্য রাজশাহীতে না থাকায় তখন পর্যন্ত মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী প্রকাশিত হয়নি।
তিনি আরো বলেন, জনাব সাদিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ফেসবুকে ও অনলাইনে উত্থাপিত হওয়ার পরদিনই বিষয়টি আমলে নিয়ে ২৭ আগস্ট আইন বিভাগের জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম এবং সর্বসম্মতি ক্রমে অভিযোগকারীর কোনো লিখিত অভিযোগের অনুপস্থিতিতে একটি ‘সত্যানুসন্ধান’ কমিটি গঠন করে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার পরে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে এই বিষয়ে আমার সারা জীবনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলি। সত্যানুসন্ধান কমিটি ১০ সেপ্টেম্বর সিলগালাকৃত রিপোর্ট ও সারসংক্ষেপ অ্যাকাডেমিক কমিটির কাছে উপস্থাপন করে। উক্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয় জানালে অ্যাকাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সিলগালাকৃত রিপোর্টটি যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। উক্ত সভাতেও আমি উপস্থিত ছিলাম।
‘গত মঙ্গলবার সিন্ডিকেট সভায় ৭৫টি এজেন্ডার মধ্যে উক্ত বিষয়টি একটি এজেন্ডা হিসেবে উপস্থাপিত হয়। যৌন নিপীড়ন বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত সেল আছে, যাঁরা এ বিষয়ে একমাত্র বৈধ তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান, যাঁরা তদন্ত করে রিপোর্ট বিবেচনার জন্য সিন্ডিকেটে পাঠান। তাঁরা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে রিপোর্ট দিলে অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩-এর ৫৫ ধারা মতে ‘মোরাল টারপিচুড’-এর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতিনিধিসহ চূড়ান্ত বরখাস্তের জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক আরেকটি কমিটি গঠিত হয়।
সেই প্রক্রিয়া শেষ হলেই একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা যায়। এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তির বিরুদ্ধে অভিযুক্ত ব্যক্তি হাইকোর্টে গেলে পদ্ধতিগত ভুলের কারণে উক্ত সাজা বাতিল হতে পারে এবং এ ধরনের নজির বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। চূড়ান্ত বরখাস্ত ছাড়া যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের ফৌজদারী বিচারের ক্ষমতা আইন অনুযায়ী সিন্ডিকেটের নাই।’ অধ্যাপক ওয়াহিদ আরো যোগ করেন।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের পক্ষ নেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সিন্ডিকেট জনাব সাদিকুল ইসলামের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনগত এই পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্তই নিয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে তদন্ত চলাকালীন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। উক্ত সিদ্ধান্তে কোথায় আমি বা সিন্ডিকেট জনাব সাদিকুলের পক্ষ অবলম্বন করেছি বা করেছে তা আমার বোধগম্য হয়নি। আমি ২৯ বছরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময়ে এই বিষয়টি নিয়ে সারা জীবন সোচ্চার ছিলাম এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমার নিকটাত্মীয় হলেও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছি।
গতকালের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার আগেই আমার কোনো বক্তব্য না নিয়ে এবং এ বিষয়ে পদ্ধতিগত জ্ঞান না থাকা সত্বেও আমার বিরুদ্ধে নানা কুরুচিপূর্ণ কথা বলে এবং এসংক্রান্ত খবর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করে আমার সম্মানহানির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে কার্যকলাপ করা হয়েছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সংগে সকলকে এ ধরনের হীন কাজ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানাই।
শেয়ার করুন