ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পাশে নবনির্মিত একটি ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে সবার মনে তৈরি হয়েছে নানা কৌতূহল। গত বুধবার রাতে ছাত্র-জনতা বাড়িটি ভাঙার সময় সেই স্থানটি কারও তেমন দৃষ্টির সীমানায় আসেনি। কয়েকজন যুবকের সেটি নজরে এলেও বিষয়টি তারা পাত্তা দেননি। কিন্তু, গত শুক্রবার রাত থেকে ওই আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখ মুজিবুর রহমানের পুরোনো বাড়ির পাশের নবনির্মিত ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডটি পানিতে পরিপূর্ণ। পানিতে একজোড়া স্যান্ডেল, একটি লুঙ্গি ও একাধিক পানির বোতল ভাসতে দেখা গেছে। ওই পানিতে চুলও ভাসছিল। সেখানে আসা দর্শনার্থীদের কেউ কেউ পানিতে নেমে বিকল্প সিঁড়ি রয়েছে কি না তা খোঁজার চেষ্টা করছেন।
ধানমন্ডি ৩২-এ আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে কৌতূহল
কাউকে অলো জ্বালিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। ঢাকা ছাড়াও অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসেছেন আন্ডারগ্রাউন্ডটি দেখতে। কেউ কেউ ছবিও তুলছেন। কেউ নিজ ফেসবুকে করছেন লাইভ। কেউ আবার একে নতুন আয়নাঘর বলে অবহিত করেছেন। আবার কেউ বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছেন।
পুলিশ জানায়, ওই স্থানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই ৯৯৯-এ কল দিয়েছেন। কোনো কোনো দর্শনার্থী জানিয়েছেন নিকটবর্তী থানার পুলিশকে। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি পাত্তা দেয়নি। কেউ থানায় ফোন দিলে ডিউটি অফিসার বিষয়টি শোনার পর কল কেটে দিয়েছেন।
আরো দেখা যায়, ভাঙা বাড়িটি দেখতে অসংখ্য মানুষ এসেছেন। উৎসুক মানুষের চাপে ওই বাড়ির সামনের সড়কে যানজট দেখা দেয়। কেউ কেউ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন আবার যারা ওই সড়ক দিয়ে যাচ্ছেন তারাও গাড়ি থামিয়ে ভাঙা বাড়িটি দেখছেন। এদিকে ভাঙা বাড়ির জিনিসপত্র যে যার মতো নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙা বাড়ির পাশের ভবনে ওই রহস্যময় আন্ডারগ্রাউন্ডের অবস্থান।
দেখা গেছে, ভবনটি নির্মাণাধীন। মাত্র একতলার ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডে আরও দুই তলা রয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ডের নিচে নামার পর এটি মূলত গাড়ির পার্কিং এরিয়া বলে মনে হয়েছে। তবে এর নিচে আরও একতলা রয়েছে। ফ্লোরটি পানিতে পরিপূর্ণ।
স্থানীয়রা জানালেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই ভবনে মাদকসেবীরা থাকতেন।
৩২ নম্বরে আসা আরমান নামে এক যুবক জানান, এ আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখতে পান তিনি। এরপর তিনি ও তার বন্ধু ওই আন্ডারগ্রাউন্ড দেখতে আসেন। তিনি নিচে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু, গভীর হওয়ার কারণে উঠে পড়েন। আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে প্রচণ্ড গন্ধ বের হচ্ছে। তাই বেশিদূর যাওয়া যায়নি। তার কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়েছে।
সোহেল নামে আরেক যুবক জানান, আন্ডারগ্রাউন্ডে আরো একতলা পার্কিং এরিয়া থাকতে পারে। পানি বেশি থাকার কারণে সেটি বোঝা যাচ্ছে না।
সাভার থেকে আসা রাবেয়া আক্তার জানান, আওয়ামী লীগের পতনের পর বিভিন্ন বন্দিশালার কথা শুনেছি। এটি গোপন বন্দিশালা কি না তা দেখতে এসেছি। তবে সেখানে পানি ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না।
উল্লেখ্য, ওই আন্ডারগ্রাউন্ড দেখে সবার মধ্যে আয়নাঘরের কথা মনে হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী মতের লোকজনকে বন্দি রাখার জন্য গোপন বন্দিশালা তৈরি করা হয়। সেখানে দিনের পর দিন তাদের অন্ধকার কুঠরিতে রাখা হতো। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর একাধিক আয়নাঘর থেকে ছাড়া পান ভুক্তভোগীরা। গুম কমিশন ওই আয়নাঘরের সত্যতা পেয়েছে।