নগরে জলাবদ্ধতা : বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন মেয়র আরিফ

সিলেট

সম্প্রতি অল্প বৃষ্টিতেই সিলেট মহানগরীর প্রায় সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তলিয়ে যায় নগরীর প্রাণকেন্দ্রগুলোর রাস্তাও। মানুষের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ দিতে নগরবীদ বা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শীঘ্রই জরুরি বৈঠকে বসছে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শমতে অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সিসিক। 

বিষয়টি জানিয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টার দিকে নির্মাণাধীন সিলেটের কেন্দ্রীয় বাস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় মেয়র আরিফ আরও বলেন- শুধু বলা হচ্ছে, অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে সিলেট নগরীতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নটি কেউ চিহ্নিত করে দেখাচ্ছে না। মূলত জলবায়ূ পরিবর্তন, নগরীর বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজনীয় উচ্চতা এবং জায়গা নিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, শহরের পানি যেসব রাস্তা দিয়ে বাইরে গিয়ে পড়বে, সেসব জায়গায় ভরাট বা প্রতিবন্ধকতা- এসব কারণেই সিলেট শহরে ইদানিং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। উন্নয়ন অপরিকল্পিত হয়নি। তারপরেও নগরবাসীকে ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শীঘ্রই বিশেষজ্ঞ একটি টিমের সঙ্গে বৈঠক করবো এবং অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে তাদের পরামর্শমতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

উল্লেখ্য, ‘জলযন্ত্রণার’ নিয়তি যেন পিছু ছাড়ছে না সিলেট মহানগরবাসীর। অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে পড়তে নগরবাসীকে। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে জনমানসে। শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতা থেকে কেন মুক্তি মিলছে না, প্রশ্ন সবার। চলতি বৃষ্টির মৌসুমে বেশ কয়েকবার জলমগ্ন হয়েছে সিলেট নগরী। গত জুলাই মাসেও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন নগরবাসী। তখনও ১২২৮ কোটি টাকা কোথায় গেল, সেই প্রশ্ন ওঠে জোরেশোরে।

সর্বশেষ চলতি সপ্তাহের সোমবার সকালে তিন ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয় সিলেট। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। নগরবাসী পড়েন চরম ভোগান্তিতে।

এ দিন ভারী বৃষ্টিতে মহানগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, রাজারগলি, উপশহর, যতরপুর, ছড়ারপাড়, ভাতালিয়া, জল্লারপাড়, তালতলা, চৌহাট্টা, সুবিদবাজার, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, শিবগঞ্জ, নয়াবাজার, খাসদবির, মেডিকেল রোড, মজুমদারিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। অনেক এলাকায় সড়কে হাঁটুপানি জমে। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসা-বাড়িতে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়ে পানি। বিশেষ করে নিচু এলাকায় বসবাসরত মানুষেরা দুর্ভোগে পড়েন বেশি। শুধু পানি-ই ঢকেনি, ড্রেনের ময়লা-আবর্জনামিশ্রিত পানি ঢুকে পড়ে অনেকের বাসা-বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।

সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চলাচলেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অনেকেই সকালে অফিসে যাওয়ার বেরিয়ে জলমগ্ন সড়কে যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিকে সঙ্গী করে যান কর্মস্থলে। এছাড়াও এদিন জলাবদ্ধতার পানি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের নিচতলায়ও ঢুকে পড়ে। ফলে সকালের ক্লাস ও পরীক্ষা সকালে স্থগিত করা হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর বিকালে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

নগরবাসীর অভিযোগ- জলাবদ্ধতার পেছনে শুধু ভারী বৃষ্টিই দায়ী নয়, এর পেছনে সিটি করপোরেশনের কর্তাদেরও দায় আছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরও নগরীতে যখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, তখন সংশ্লষ্ট কাজে গাফিলতি আছে। এছাড়া ছড়া-খাল, নালা-নর্দমা নিয়মমাফিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করাও জলাবদ্ধতার অন্যতম একটি কারণ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *