নতুন পেঁয়াজে বাজার সয়লাব, দামও কমেছে

জাতীয়

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে অস্থির হয়ে উঠে দেশের বাজার। এক লাফে ২৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকে পেঁয়াজ। সংকট না থাকলেও অস্থির হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যটির বাজার। তবে এবার বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এ পেঁয়াজের দাম কম হলেও পুরোনো দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো বেশি।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা গত শুক্র-শনিবার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

এদিকে পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও এ পেঁয়াজ ৭০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাতাসহ মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নেমেছে ৬০ টাকা কেজিতে।

তবে পুরোনো দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো বেশি। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। যা ২৪০ টাকা পর্যন্ত ছিল। এছাড়া অধিকাংশ দোকানেই পাওয়া যায়নি দেশি পেঁয়াজ। এছাড়া চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকা কেজি।

মালিবাগ বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ইয়াকুব মিয়া বলেন, পুরোনো পেঁয়াজের সরবরাহ কমে এসেছে। বাজারে আসতে শুরু করেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এখন সরবরাহ ভরপুর। অনেক চাষি ভালো দামের আশায় আগাম পেঁয়াজ তুলছেন। সে কারণে দামও কিছুটা কমেছে। কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে।

দেশে সিংহভাগই পেঁয়াজ উৎপাদন হয় রবি মৌসুমে। আশ্বিন থেকে ফাল্গুন— এ সময়ে প্রথম দিকে কন্দ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়। এরপর চারা বা হালি পেঁয়াজ আবাদ করেন কৃষক। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়। কিন্তু এ বছর কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটতে শুরু করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের রবি মৌসুমে মোট দুই লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টরে এবছর আবাদ করা হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় আট লাখ টন। দুই-তিন মাস দেশের বাজারে এ পেঁয়াজ থাকে। এরপর মার্চে হালি পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৮ লাখ টন।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সবশেষ অর্থবছরে ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে মাঠ পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যেতে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়, কিংবা শুকিয়ে কমে যায়। চলতি বছরের মার্চে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। এরপর জুনের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০০ টাকায় ঠেকলে ৫ জুন থেকে আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৯১ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এর বিপরীতে আমদানি হয়েছে সাত লাখ পাঁচ হাজার ৪৩৭ টন।

এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এছাড়া সারাদেশে প্রায় তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের ৫৩টি টিম। এসব অভিযানে ১২২টি প্রতিষ্ঠানকে আট লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *