হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়কে সৌদি দূতাবাস বানিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে এমন প্রতারণা করতে গিয়ে শনিবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশের হাতে আটক হন তারা।
আটক ব্যক্তিরা হলেন নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদ প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর বানিয়াচং উপজেলার জমশেদ মিয়া, সুনামগঞ্জ পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ফাহিম চৌধুরী।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডালিম আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সৌদি যেতে আগ্রহী নারীদের কাছ থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল বলে খবর পাওয়া যায়। পরে সেখানে অভিযান চালানো হয়।
ওসি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সৌদি আরবে যেতে হলে সৌদি দূতাবাসে গিয়ে আঙুলের ছাপ দেয়ার নিয়ম থাকলেও শেষ দিন শনিবার মানুষের সুবিধার্থে দূতাবাস নবীগঞ্জে আঙুলের ছাপ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে বলে গল্প সাজায় অভিযুক্তরা।
‘এমন তথ্যের ভিত্তিতে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে আঙুলের ছাপ দিতে আসেন সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলকার ২০ থেকে ২৫ নারী।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের বরাতে তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে বাউসা ইউনিয়নে চলছিল নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম। শনিবার অন্য দিনের মতো নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্মনিবন্ধন নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার পর আঙুলের ছাপ দিচ্ছিলেন ওই ইউনিয়নের নতুন ভোটাররা।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদের প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর জমশেদ মিয়া নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্মনিবন্ধন নম্বরের তথ্য অপূরণ রেখেই সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমীর আঙুলের ছাপ নেন।
ওসি জানান, পরে নেত্রকোণা থেকে আসা ফাহিমা ও বিশ্বনাথের রিমা বেগমের আঙুলের ছাপ দেয়ার সময় অপরিচিত দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের তিন কর্মীকে আটক করা হয়। এ সময় মোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি ২২ জন নারীসহ পালিয়ে যান।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, খবর পেয়ে তিনি ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে যান।
সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী বলেন, ‘আমি তিন বছর সৌদি আরবে ছিলাম, এক বছর আগে দেশে এসেছি। আবার আমাকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আবু সুফিয়ান নামের এক দালাল ১৫ হাজার টাকাসহ পাসপোর্ট নেয়, সুফিয়ান জানায় সৌদি যেতে হলে অ্যাম্বাসিতে আঙুলের ছাপ দিতে হবে।
‘তাই সুফিয়ান তার সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া ও ফাহিম চৌধুরীর মাধ্যমে সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুক আমিসহ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জন নারীকে আঙুলের ছাপ দেয়ার জন্য সৌদি অ্যাম্বাসিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি মাইক্রোবাসে করে এখানে নিয়ে এসেছে, আমি আঙুলের ছাপও দিয়েছি।’
নেত্রকোণার ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করি, সৌদি আরবে নেয়ার নাম করে সুফিয়ান নামের এক দালাল আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। শনিবার সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য আঙুলের ছাপ দেয়ার শেষ দিন এমন কথা বলে চট্টগ্রাম থেকে আমাকে এখানে আঙুলের ছাপ দেয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। ঝামেলার জন্য আমি আঙুলের ছাপ দেইনি।’
রিমা বেগম বলেন, ‘আমিসহ ২৫ জন নারী সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে কয়েক লাখ টাকা সুফিয়ান ও তার সহযোগী মোফাজ্জল মিয়া, ফাহিম চৌধুরীর কাছে দিয়েছি। আজ ফিঙ্গার দেয়ার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে।’
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে অন্যান্য উপজেলার নাগরিকদের নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নে নাগরিক করার জন্য ভোট তোলা হচ্ছে- এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে এসে এর প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি।
‘বাউসা কেন্দ্রের টিম লিডার মতিউর রহমান দালাল চক্র ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আমাদের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওসি ডালিম আহমেদ বলেন, ‘সৌদি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বাসিতে আঙুলের ছাপ দেয়ার নাম করে একটি চক্র বিভিন্ন জেলা থেকে নারীদের বাউসা ইউনিয়ন অফিসের চলমান নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়ে আসে। এখানে নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়েই অন্য জেলার নারীদের আঙুলের ছাপ নেয়া হয়। এ ঘটনায় কম্পিউটার অপারেটরসহ তিনজন প্রতারককে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
শেয়ার করুন