বরগুনার পাথরঘাটায় আসরের নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ফুয়াদকে (৪৫) কুপিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে। রোববার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জোমাদ্দার বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
আহত আবুল হোসেন ফুয়াদ কাকচিড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল হালিম জোমাদ্দারের ছেলে। অভিযুক্ত গোলাম মাওলা কাকচিড়া ইউনিয়নের ইউসুফ জোমাদ্দারের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা।
ফুয়াদের স্ত্রী শিউলি বেগম বলেন, বাড়ি থেকে আসরের নামাজ পড়তে মসজিদের দিকে যান ফুয়াদ। বাড়ি থেকে কিছুদূর গেলেই গোলাম মাওলাসহ বেশ কয়েকজন ফুয়াদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফুয়াদের বোন মর্জিনা বলেন, ঘটনা দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে গোলাম মাওলার পা ধরে আমার ভাইয়ের জীবনটা ভিক্ষা চাইলে আমাকেও লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে কোপ দিতে আসে। এ সময় আমি সরে যাই।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার সময় ফুয়াদ জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাকচিড়ার বিভিন্ন স্থানে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা, বিজয় আসবেই’ এমন স্লোগানের পোস্টার লাগালে সেগুলো শুক্রবার সকালে আমরা ছিঁড়ে ফেলি। এর জেরে আমার ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলা, রুমন, রাশেদ, ওমর, ইউসুফসহ ৮ থেকে ১০ জন।
বিজ্ঞাপন
কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন বলেন, ফুয়াদ বিএনপির সক্রিয় কর্মী হওয়ায় গোলাম মাওলাসহ ছাত্রলীগের সমর্থকদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল তার। এর জেরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফুয়াদের ওপর হামলা করেছে। গোলাম মাওলা ছাত্রলীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন পহলানের একান্ত সহচর।
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, প্রকাশ্যে আসতে না পেরে আ.লীগ ও এর সাঙ্গপাঙ্গরা গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে। আসরের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার পথে ফুয়াদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে। এর একমাস আগে পাথরঘাটা উপজেলা যুবদল নেতা নাসিরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় নাসির হত্যাকাণ্ডের আসামিদেরকেও পুলিশ আটক করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
অভিযোগের ভিত্তিতে গোলাম মাওলার ফুফু তাসলিমা বেগম বলেন, ফুয়াদ ও গোলাম মাওলার বাবা ইউসুফের সঙ্গে বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য টাকা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ৫ আগস্টের পর ফুয়াদ জোমাদ্দার গ্রাম্য বাজারের চায়ের দোকানে বসে গোলাম মাওলা ও তার বাবা ইউসুফকে চড়-থাপ্পড় মারছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এর জেরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, ফুয়াদের শরীরে ৫টির মতো গুরুতর কোপ রয়েছে। কোপগুলো অনেক গভীর। এ ছাড়াও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আহত ফুয়াদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, ফুয়াদ ও গোলাম মাওলাদের মধ্যে বিদেশে লোক পাঠানোর বিষয়ে টাকা পয়সা লেনদেন ছিল। হামলার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে যাই। ঘাতকদের আটকের জন্য অভিযান চলছে। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ ছাড়াও যুবদল নেতা নাসির হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তারেরে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, নাসির হত্যা মামলায় একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরকে আটক করতে অভিযান চলছে।
শেয়ার করুন