নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে নারীদের উপস্থিতিতে বিশ্বনাথে সংবাদ সম্মেলনে

সিলেট

ফারুক আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন মৌলভীরগাঁও গ্রামে গত ২২ সেপ্টেম্বর গুলি করে আতংঙ্ক ছড়িয়ে প্রবাসীর নির্মিত একটি গেইট ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ‘সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জড়িত অস্ত্রবাজদের গ্রেপ্তার, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, সাজানো মিথ্যা মামলা হতে নিরিহ এলাকাবাসীকে অব্যাহতি ও সেই সাজানো মামলার বাদীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন এবং গ্রামবাসীর জানমালের নিরাপত্তা’র দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব কার্যালয়ে রবিবার (১ অক্টোবর) সকালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একাধিক নারীর পাশাপাশি উপস্থিত স্কুল শিক্ষার্থী নেহাসান আরিফ অভিযোগ করেন গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী ঘটনার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই এলাকায় গুলির শব্দ শুনা যায়, এতে পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। একাধিক রাউন্ড গুলির শব্দে নারী ও শিশু-কিশোররা আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। এটা থেকে আমরা নিরাপদে বাঁচতে চাই। সরকার ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আরিফ হাসান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রায় ১০/১১ মাস পূর্বে মৌলভীরগাঁও গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মহবুব মিয়া ও লেবু মিয়া ‘মৌলভীরগাঁও মৌজার জেএল নং ৫৩, খতিয়ান নং ৫৪ ও দাগ নং ৮৯৬১’র নিজস্ব ভূমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সকলের জ্ঞাতসারে একটি গেইট নির্মাণ করেন। কিন্তু পূর্ব শক্রতার জের ধরে গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার একই গ্রামের তুফায়েল, সাব্বির, আবুল হোসেন, সাইকুল, জাহেদুল, শহিদুল, মাজিদুল, মানিক, খালেদ, সিরাজ ও সাজ্জাদের নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী বন্দুক, পিস্তল, সুলফি, দা ডেগার, কুড়াল, লোহার সাবল, হেমার, লোহা কাটার মেশিনসহ মৌলভীরগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামটি ঘেরাও করে যুক্তরাজ্য প্রবাসি লেবু মিয়ার চাচাত ভাই শায়েস্তা মিয়া, জয়নাল আবেদীন, রাহেদ মিয়া ও লায়েক মিয়াসহ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাম ধরে খুঁজতে থাকে এবং মুহু মুহু গুলি করে পুরো এলাকায় আতংঙ্ক সৃস্টি করে প্রবাসী লেবু মিয়ার বাড়ির রাস্তার গেইট ভাঙ্গা শুরু করেন।

প্রবাসী লেবু মিয়ার বাড়ির রাস্তায় নির্মাণাধীন গেইট ভাঙতে শুরু করলে একাধিকবার থানা পুলিশকে বিষয়টা জানানো হয়। পুলিশ না আসায় ৯৯৯ নাম্বারে কল করা হয়। এর প্রায় চার, সাড়ে ৪ ঘন্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তখন গ্রামবাসি অস্ত্রধারীদেরকে দেখিয়ে দিলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেননি। অথচ সন্ত্রাসীরা ২০/২৫ রাউন্ড গুলি করার পর থানা পুলিশের ইশারায় গুলির খোসা কুড়িয়ে নেয়, তারপরও কয়েকটি খোসা গ্রামের লোকজন পেয়ে যান। গেইট ভাঙ্গার সময় কয়েক জন অস্ত্রধারী সস্ত্রাসীরা চিৎকার করে বলেছিল ৪টি লাশ ও গেইট ভাঙ্গার জন্য ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছি, প্রয়োজনে আরো ৩০ লাখ টাকা খরচ করব। ঘটনার পর রাতে থানায় মামলা করতে গেলে অস্ত্রধারীদের সেখানে (থানায়) বসা দেখে অভিযোগ না দিয়ে আমরা আদালতে মামলা দায়ের করি (মামলা নং বিশ্বনাথ সিআর ৪৫/২০২৩ইং)।
দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলা দায়েরের এত দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি এবং কোন অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। ঘটনার পরদিন শনি ও রবিবার পুলিশ পাহারায় থাকাবস্থায় সন্ত্রাসীরা দুই দিন ‘আব্দুল মতিন ও জাহিদুল হক’র বাড়িতে থাকলেও তা পুলিশের নজরে পড়েনি। অথচ ঘটনার ৬দিন পর আমাদের মামলার অভিযুক্ত সাইকুল ইসলাম বাদী হয়ে গ্রামের নিরীহ মানুষকে অভিযুক্ত করে সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো কাল্পনিক একটি মামলা দায়ের করে (মামলা নং সিআর ৪৬/২০২৩ইং)।

২০২২ সালের নভেম্বরে যুক্তরাজ্য প্রবাসি মিয়াজান আলী গ্রামবাসিকে নিয়ে এক বৈঠকে প্রবাসি লেবু মিয়ার পাশের বাড়ির ‘জামাল, মানিক, নূরুল ইসলাম’ গংদের রাস্তার জন্য ৪ হাত প্রস্থ জায়গা দেয়ার অনুরোধ করলে প্রবাসী লেবু মিয়াসহ সকল ভাই মিলে ৫ হাত পর্যন্ত রাস্তা দেওয়ার ও বাস্তার মাটি কাটার জন্য টাকা দেওয়ার সম্মতি জ্ঞাপন করেন। তখন প্রবাসী লেবু মিয়ার জায়গায় একটি গেইট নির্মাণের কথা বললে ‘জামাল, মানিক, নুরূল’সহ প্রতিপক্ষের সকলেই গেইট নির্মাণে তাদের কোন আপত্তি নেই বলে গ্রামবাসীকে জানান। কিন্তু গেইট নির্মাণের পর কতিপয় অসৎ ব্যক্তিদের প্ররোচনায় গেইট জোরপূর্বক ভেঙ্গে প্রবাসী লেবু মিয়া গংদের বাড়ির জমি দখলের চেষ্টা শুরু করে। পুলিশ একাধিক অভিযোগ পেয়ে তৎকালীন বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে গেইটের স্থান পরিদর্শন করে লেবু মিয়ার কাগজ পত্রে দেখা যায়, নির্মিত গেইটের চতুরদিকে তাদের নিজস্ব জমি রয়েছে এবং গেইটে কারো কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এনিয়ে একাধিকবার থানায় বৈঠকের পর পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে লিখিতভাবে নিস্পত্তি করা হয়। কিন্তু সাবেক ওসি বদলি হওয়ার পরই সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে সেই গেইটি ভেঙে দেয়া হয়।
এমনকি গত ৩০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বিশ্বনাথ থানার এসআই মোয়াজ্জেম আমাদের মামলার তদন্তে গেলে পুলিশের সামনেই মামলার অভিযুক্তরা আমাদের (বাদী পক্ষ) উপর হামলা করার চেষ্টা করে। যেকোন সময় তারা আমাদেরকে (বাদী পক্ষ) খুন করতে পারে বলে আশংঙ্কা করছি অমরা। বর্তমানে আমাদের গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের দিলোওয়ার হোসেন, হুসনা বেগম, লিপি বেগম, আম্বিয়া বেগম, জাহানারা বেগম, পিয়ারা বেগম, সুজিনা বেগম, রাসেদা বেগম ও আজিজুর রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *