নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : নিত্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বেশ বিপাকে রয়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিটি পণ্যের দামই হু হু করে বাড়ছে। শীত ঘনিয়ে আসলেও কমার লক্ষণ নেই সবজির দামও। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শিম, বাধাকপি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, গাজরসহ সকল শীতকালিন সবজি।

শুক্রবার নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দাম বাড়ার কোনো কারণ না থাকলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে মোটা চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডালসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এসব পণ্যের বাড়তি দামের চোটে যেমন একদিকে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় পণ্য কম কিনছেন, তেমনি বিক্রেতাদেরও কেনাবেচা কমেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের পড়তে হয়েছে সমস্যায়। অনেকে কমিয়ে দিয়েছেন খাবারের মেন্যু।

শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহেও বেড়েছে চালের দাম। সরু ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা করে। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ৬৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সরু চাল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে। এছাড়া ৫৬ টাকা কেজি দরের মাঝারি মানের চাল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ৩ দিনে মিল পর্যায়ে মোটা চাল প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সে কারণে খুচরা বাজারে খোলা চালের দামও বেড়েছে ১-২ টাকা। প্রতি কেজি পাইজাম ও গুটি স্বর্ণা জাতের চাল ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা, আর বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।

বেড়েছে আটার দামও। গত সপ্তাহে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খোলা আটা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে, আর ৬২ টাকা কেজি দরের প্যাকেট আটা ৬৩ টাকা কেজি। দোকানিরা বলছেন, প্রতিকেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। যা আগে কেজিতে ৫ টাকা কম ছিল। একইভাবে ভালো মানের ময়দার দাম এখন ৬৫-৭০ টাকা। ডালের দামও গত তিন-চার দিনে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। শুধু চাল বা আটা নয়, ক্রেতাদের পক্ষে বাজার থেকে কোনও পণ্যই আগের মতো কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম বাড়ছে মোটা চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডালসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। বাড়তি দামের কারণে একদিকে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় কম পণ্য কিনছেন, অপরদিকে বিক্রেতারাও বলছেন, তাদের কেনাবেচা কমে গেছে।
দোকানীরা বলেছেন, আগে যারা ৫ কেজি পণ্য কিনতেন, তারা এখন ২ কেজির বেশি কিনছেন না। কারণ, সবকিছুর দাম বাড়তি। দাম শুনে অনেকে পণ্য না কিনেও ফিরে যাচ্ছেন। যেটা না নিলেই নয়, সেসব পণ্য এক কেজির জায়গায় আধা কেজি নিচ্ছেন। আগে যারা পুরো প্যাকেট নিতেন, এখন তারা খোলা কিনছেন।

নতুন করে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে ভোজ্যতেলের বাজারে। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছিল এক মাস আগে। এরমধ্যেই আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবার তারা লিটারে ১৫ টাকা বাড়াতে চান। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়ার পর এরইমধ্যে বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। সেজন্য এখন বেশিরভাগ দোকানে আগের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৫৮ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কিনতে হচ্ছে আরও বেশি দামে।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরকার ঘোষণা দেওয়ার আগেই ডিলাররা তেলের দাম বেশি নেওয়া শুরু করেছে। বোতলজাত সয়াবিনের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বেড়েছে পাইকারি বাজারে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ড্রাম (২০৪ লিটার) সয়াবিন ও পাম তেলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে।অবশ্য টিসিবির তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ৫ লিটার বোতলজাত সোয়াবিনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। খোলা পাম অয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে ৩ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ১১২ টাকা লিটার খোলা পাম অয়েল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা দরে।
বাজারে চিনির দাম এখনও কমেনি। প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আবার সরকারি চিনিকলের চিনিগুলো প্রতিকেজি ৮৫ টাকা দর নির্ধারিত থাকলেও সেসব বাজারে মিলছে না। যদিও শুক্রবার থেকে চিনির খুচরা মূল্য ৯৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সেই দামে চিনি পাওয়া স্বপ্নের মতো মনে করেন খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
দেশি প্রতি কেজি মসুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ এবং আমদানি করা ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যে মোটা মসুর ডাল বিক্রি হয় ৯৫ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে সেই একই ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। সবচেয়ে কম দামি মসুর ডালের দামও বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকার মতো।

সপ্তাহের ব্যবধানে আরও ১০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি ঠেকেছে ৫০ টাকায়। আবার ভালো মানের বাছাই করা পেঁয়াজ নিতে গেলে কোথাও কোথাও ৫৫-৬০ টাকাও দিতে হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশী রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

শুকনো মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ৩৪০ টাকা কেজি দরের দেশি শুকনো মরিচ এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহে আমদানি করা ৪৪০ টাকা কেজি দরের শুকনো মরিচ এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।
আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা। গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরের দেশি আদা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি দরের আমদানি করা আদা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা কেজি। একইভাবে গত সপ্তাহে ৪৪০ টাকা কেজি দরের জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি করে।

এদিকে নতুন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও শিম এলেও তার দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। শুধু তাই নয়, বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম রাখা হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি। ৭০ টাকা বা তার কিছু কমবেশি দামের সবজির তালিকায় রয়েছে কাঁকরোল, কচুর লতি, করলা, ঝিঙা ও শিম। বেগুন, পটল, চিচিঙ্গা, মুলার কেজি ৫০ টাকা। কম দাম শুধু পেঁপের, যা ৩০ টাকা কেজি।
গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরের শসা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অপরদিকে মৌসুম শেষ হওয়াতে ৪০ টাকা কেজি দরের কাঁকরোলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকায়।

সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম গাজর ও টমেটোর। গাজরের কেজি ১৪০ টাকা এবং পাকা টমেটো ১২০ টাকা। কাঁচা টমেটো মানভেদে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরের ফুলকপির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকায়, ৪০ টাকা দরের লাউ এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া ৫০ টাকা কেজি মুলা, ৬০ টাকা কেজি দরে ঢেঁড়স, ৮০ টাকা কেজি বরবটি এবং ৫০ থেকে ৬০ কেজি দরে পটল বিক্রি হচ্ছে। আর কলমি শাক ১০ টাকা, মুলা শাক ২০ টাকা, লাউ শাক ৫০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা, পাট শাক ২০ টাকা, লাল শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ৫০ টাকা, ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ৩০ টাকা থেকে লাউ শাকের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়।
মাছের বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি পাঙ্গাশ মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট সাইজের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বড় তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, রুই মাছ আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চাষের কই ২৪০ টাকা, বড় কাতল ৩৬০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে আকার ভেদে ১০০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৭০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ টাকা, ছোট বোয়াল ৬০০, বাইম মাছ ৭০০ টাকা, ছোট বাইলা মাছ ৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। এছাড়া এক কেজি ওজনের ইলিশ ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেড় কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের বড় ইলিশ ১৪০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

দুই মাস আগে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছিলো। এক ধাপ দাম কমলেও আবারও গত মাসে ব্রয়লারের দাম পৌছায় ১৮০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজি দরে। আর ডিমের হালি ৫০ টাকা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *