নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র তথাকথিত হিজরতের ডাকে ঘরছাড়া অর্ধশতাধিক তরুণের খোঁজ এখনো মেলেনি। এ অবস্থায় যেকোনো সময় নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব জানায়, কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা যেকোনো ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। সংগঠনটির উচ্চ মহলের নির্দেশে তারা নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক ও হিজরত বিষয়ক সমন্বয়কসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা হলেন— আব্দুল কাদের ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল (২৪), ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর (২২), মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু (২৩) ও হেলাল আহমেদ জাকারিয়া (৩৩)।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বাচ্চু সংগঠনটির অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক, সোহেল ও হানজালা হিজরতকৃত সদস্যদের সমন্বয়ক এবং জাকারিয়া সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি উগ্রবাদী বই, একটি প্রশিক্ষণ সিলেবাস, নয়টি লিফলেট, একটি ডায়েরি এবং চারটি ব্যাগ জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের যেকোনো ধরনের নাশকতা রুখতে র্যাব সদস্য সবসময়ই প্রস্তুত থাকেন। আমরা ধরেই নিয়েছি যেহেতু অনেক জঙ্গি নিরুদ্দেশ হয়েছে, সেহেতু তারা যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সবসময় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিবাদ বর্তমানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এটা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। আমরা কখনোই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না, যেকোনো সময়ই যেকোনো স্বার্থান্বেষী উস্কানিতে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নাশকতা ঘটাতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এখনো আমাদের অনেক সদস্য পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছেন। যারা স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ রয়েছে এমন ৫৫ জনের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার বাচ্চুর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে তারা হয়তো অস্ত্র প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করবে অথবা নাশকতার মতো ঘটনা ঘটাতে পারে।
বিষয়টি যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, বাচ্চু দুই ধাপে একবার ১১ লাখ ও একবার সাত লাখ টাকা পাঠিয়েছে বলে জানতে পেয়েছি। এছাড়া জঙ্গিদের কাছে একে-২২ এবং একে-৩২ অস্ত্র সরবরাহের তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার জঙ্গিরা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, হিজরতকৃত সদস্যদের তত্ত্বাবধানসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত ছিল। তারা ২-৪ বছর আগে পরিচিতদের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ নেয়। সম্প্রতি র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে তারা কুমিল্লার লাকসামে আত্মগোপনে ছিল।
আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় জঙ্গিরা সদস্য ও সমমনাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো। এরপর সাংগঠনিক প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতো। এছাড়া তারা পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের পরিবারকেও আর্থিক সহযোগিতা দিতো।
গ্রেপ্তার বাচ্চু চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি সংগঠনটির অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবের অন্যতম সহযোগী এবং অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। গত ৮-৯ মাসে বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র কেনার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে ১৭ লাখ টাকা ও সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রায় ৩০ লাখসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা পাঠান বাচ্চু— জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
শেয়ার করুন