নেছারাবাদ উপজেলা (পিরোজপুর) প্রতিনিধি:
নেছারাবাদে মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে মো: জালিস মাহামুদ(৩০) নামে এক নৌকা কর্মীর হাতপা বেধে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাতে ইউপি চেয়ারম্যান মিজান গাজীর বাসার কাছাকাছি বসবাসরত ওই জালিসকে ধরে নিয়ে ফুলরাজ গাজী, রিয়াজ হোসেন রাজু এবং সাকিল হাওলাদার তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। অভিযুক্ত ফুলরাজ গাজী, সাকিল এবং রিয়াজ হোসেন রাজু এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মিজান গাজীর লোক। চেয়ারম্যান মিজান গাজীর নেতৃত্বে জালিসকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ীতে আটকে রেখে জালিসকে পিটানো হয়েছে বলে জালিসের পিতা ইদ্রিস গাজীর এমন অভিযোগ করেন।
বিষয়টি স্থানীয়রা খবর পেয়ে রাতেই ৯৯৯ কল করে পুলিশের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করে নেছারাবাদ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার তার অবস্থা গুরুতর দেখে জরুরী ভিত্তিতে ঐ রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠান।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতা ইদ্রিস গাজী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মিজান গাজী সম্প্রতি ওই ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্র পদে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জালিস মাহামুদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় পূর্বের ক্ষোভ থেকে তাকে এ মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজন সহ পরিবারের।
প্রতিবেশি মো: দানিয়াল শেখ জানায়, রোববার রাতে জালিস ঢাকা থেকে বাড়ী ফিরছিলো। এমন সময় চেয়ারম্যান মিজান গাজী মটরসাইকেল যোগে পুজা দেখে বহর নিয়ে বাড়ী ফিরছিল। তখন পথে জালিসকে দেখে চেয়ারম্যান তাকে উচ্চবাচ্চ কথা শুরু করে। জালিস তার প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যানের সাথে থাকা ফুলরাজ গাজী,রাজু হাওলাদার এবং সাকিল হাওলাদার জালিসকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে জালিসকে বেধে ফুজরাজের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার হাত পা বেধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
প্রতিবেশি কামাল জানান, আমাদের গুয়ারেখা চেয়ারম্যান ইউপি উপ নির্বাচনে জালিস সহ আমরা নৌকার কাজ করেছি। তখন চেয়ারম্যান আমাদের নিষেধ করেছিল। তাতেও তার পক্ষে কাজ করিনি। কারন তিনি হলেন জামাত বিএনপি সমর্থিত। তাই তিনি সর্বদা তার বাহীনি দিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের হুমকি ধামকি সহ নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। তারই রেশ ধরে গতরাতে আমাদের একনিষ্ঠ নৌকার কর্মী জালিসকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অমানুষিক ভাবে মারধর করেছে। জালিসের অবস্থা মুমর্ষ হওয়ায় বর্তমানে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
জালিসের পিতা ইদ্রিস গাজী অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমার ছেলে ঢাকা থেকে বাড়ীতে আসছিলো ফুলরাজ এর বাড়ীর সামনে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্র বিবাদীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওৎ পেতে থেকে আমার ছেলেকে অতর্কিত ভাবে হাতে লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়া পিছন থেকে আক্রমন করে এবং এলোপাথাড়ি ভাবে মারপিট শুরু করে। বিবাদীদের মারপিটে মাথার পিছনে ও পায়ে রক্তাক্ত ফাটা জখম হয়। তখন আমার ছেলের ডাক-চিৎকারে আমি সহ স্থানীয় লোকজন ছুটে আসিলে বিবাদীরা আমাকেও মারপিট করার চেষ্টা করে ও খুন জখমের ভয়ভীতি দেখায়। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিবাদী ফুলরাজ এর ঘরে নিয়া আটকে রাখে। আমার ছেলে পকেটে থাকা নগদ টাকা-পয়সা ও একটি আংটি নিয়া যায়। আমি এ বিষয়ে নেছারাবাদ থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিজান গাজী বলেন, আমি পূজা দেখে রাতে বাড়ী ফিরছিলাম। এমন সময় জালিস এবং সোহেল নামে দুইজন লোক আমার পথরোধ করে মারার জন্য চেষ্টা করে। এমন সময় আমার কর্মীরা জালিসকে ধরে ফেলে বাড়ীতে নিয়ে আসি। পরে থানায় খবর দিয়ে পুলিশে দিয়ে দেই। তবে তাকে কোন মারধর করা হয়নি।
নেছারাবাদ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো: গোলাম সরোয়ার জানান, গুয়ারেখায় রাতে একটি ঘটনার বিষয়ে চেয়ারম্যান সহ অপর একটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন