নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা ঔষধ প্রতিনিধির হাতে জিম্মি

জাতীয়

বরিশাল (নেছারাবাদ) প্রতিনিধি:

পিরোজপুরে নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা কথিত ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ।নিম্ন মানের কোম্পানিতে চাকরিরত স্হানীয় প্রতিনিধিরা হ্মমতার দাপট দেখিয়ে যখন তখন ঢুকে পরে চেম্বারে তাদের কোম্পানির ঔষধ লিখতে বাধ্য করা হয়।এরকম অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় অখ্যাত ওই ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি (এমআর) শামিম হাসানের বিরুদ্ধে তার কথায় চলতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশির ভাগ চিকিৎসক ও কর্মচারীদের। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে ডাক্তার চেম্বার ও ইনডোরে সবখানেই রয়েছে তার দৌরাত্ম। হাসপাতালের প্রতিটি জায়গায় রোগীদের প্রেসক্রিপশনে তার কোম্পানীর দুই একটি পোডাক্ট লেখা এখন নিয়মে পরিণত।

এ নিয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: ফিরোজ কিবরিয়ার কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেননা ভুক্তভোগীরা।

শামিম হাসান ক্ষমতাশীন দলের স্থানীয় কথিত যুবলীগ নেতা হিসেবে তার বেশ নাম ডাক রয়েছে হাসোতালের ডাক্তার ও কর্মচারীদের কাছে। যেকারনে হাসপাতাল সহ আশপাশের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও রয়েছে তার বেশ সখ্যতা। তবে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করছেন অভিযুক্ত শামিম হাসান।

হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সল্প শিক্ষিত শামিম হাসান দেড় যুগের বেশি সময় ধরে নেছারাবাদ উপজেলা হাসপাতালে একটি অখ্যাত ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তার ঔষধ কোম্পানীর প্রোডাক্ট ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনে লেখানোর জন্য কড়া তাগিদ রয়েছে হাসপাতালে সদ্য যোগদান করা ডাক্তার সহ জরুরী বিভাগের উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের উপর। বিশেষকরে ডাক্তারদের চেম্বারের চেয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা বেশি টার্গেটে থাকে তার। সেখানে কাটা ছেড়া,জ্বর,সর্দি নিয়ে যেকোন রোগ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য তার কোম্পানীর এন্টিবায়োটিক,এন্টি আলসার এর ঔষধ লেখার জন্য অব্যাহত চাপ রয়েছে শামীম হাসানের। এ ব্যাপারে কেহ মুখ খুলতেও নূন্যতম সাহস পাচ্ছেনা।

হাসপাতাল থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া আব্দুস সালাম নামে এক উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার অভিযোগ করে বলেন, শামীম হাসান স্থানীয় একজন অঘোষিত রাজনীতিবিদ। তার ব্যাপারটা আমাদের সকলের কাছে খুবই সেনসেটিভ। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কয়েকবার পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সর্বশেষ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল। বিয়টি নিয়ে শামিম আমাকে সন্দেহ করে অনেক চাপ দিয়েছিল। হাসপাতালে সামন্য রোগ ব্যাধি নিয়ে দূর থেকে কেহ আসলেই তার কোম্পানীর এন্টিবায়োটিক,এন্টিআলসার এর ঔষধ লেখা ছিল আমাদের সকলের জন্য বাধ্যতামুলক।

জানাযায়, শামীম হাসান কোম্পানীর চাকরির পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক ভিবিন্ন সভা সমাবেশে নেতাদের পাশে ছবি তুলে সর্বদাই নজরে থাকেন তিনি। স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে কোন জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিবিদের কেহ হাসপাতালে আসলেই ঝাপিয়ে পড়েন তাকে সেবার উদ্দেশ্য। এ সুবাধে খুব কম সময়ে উপজেলার সর্ব মহলে আশিবাদপুষ্ট হয়ে ওঠেন শামীম হাসান। তাই অনেকটা ভয় ও তার অশোভন আচরনে ভীত সন্তষ্ট হয়ে তার কথামত চলেন হাসপাতালের অনেক নার্স ও ডাক্তার। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন ডাক্তার কাজ করলেই তাকে পড়তে হয় নানা বিপদে। এমনকি তার হয়রানির শিকাড় হয়ে গত পাচ বছরে হাসপাতাল ছেড়েছেন কয়েকজন ভাল ভাল ডাক্তার।

এ নিয়ে একাধিকবার পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পর দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান হলেও শামীম রয়ে যাচ্ছেন অধোরা।

নাম প্রকাশ না শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন নার্স ও দু’জন ডাক্তার জানান,শামিম হাসান ওষুধ প্রতিনিধির চাকরির পাশাপাশি হাসপাতালে
চিকিৎসা নিতে আসা বিশেষকরে গর্ভবতী রোগীদের ফুসলিয়ে পছন্দের ক্লিনিক ও প্যাথলজিতে পাঠান সেখান থেকে রোগী প্রতি ডাক্তার ও ক্লিনিকের কাছ
কমিশন নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, সে যেহেতু স্থানীয় তাই অনেক সময় ইচ্ছা স্বত্ত্বেও তাকে কিছু বলা যায়না। তাই মাঝেমধ্য তার কোম্পানীর দুই একটি প্রোডাক্ট রোগীদের প্রেসক্রাইভড করছি। তবে শামিম যদি চেম্বারে ডুকে তার কোম্পানীর ঔষধ লেখাতে বাধ্য করেন তাহলে তাকে অফিস সময়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতে নিষেধ করব।

অভিযুক্ত শামীম হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে বাধ্য করে আমার কোম্পানীর ঔষধ লিখাইনা। হাসপাতাল থেকে কোন গর্ভবর্তী রোগী ভাগিয়ে নেইনা। এমনকি কোন জায়গা থেকে কোন কমিশনও খাইনা। আমার সহকর্মিরা এবং হাসপাতালের একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে ষড়যন্ত্রে নেমেছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *