সুনামগঞ্জ- ১ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সাংসদ সহ ৯ প্রার্থী পৃথক বলয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ১০ প্রার্থীর মধ্যে শেষ দিনে ৯ প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এই আসনে নৌকা ‘ঠেকাতে’ ভোটের মাঠে মনোনয়ন বঞ্চিত সংসদ সদস্য ও দলীয় ১জন পদধারী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন, সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগ সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ। এই নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ- ১ আসনটি ৪ টি উপজেলা (জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর) নিয়ে গঠিত। সুনামগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় আসন এটি। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬২ হাজার ৫৬৫ জন। এই আসন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন ১০ জন, দাখিল করেছেন ৯ জন। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ তেমন নেই। তবে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎস উদ্দীপনা দিয়েছে।
এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রনজিত সরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত সেলিম আহমদ, গণফ্রন্ট’র জাহানুর রশীদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির হারিছ মিয়া, জাতীয় পার্টির আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ কংগ্রেস’র সালেহ আহমদ, তৃণমূল বিএনপির মো. আশরাফ আলী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. রফিকুল ইসলাম।
এ আসনে নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন কেন্দ্রীক দ্বন্দ্ব শুরু হয় বছর খানেক পূর্ব থেকেই। কোন্দলের কারণে গ্রুপ -উপগ্রুপে বিভক্ত ছিল এ দলটি। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত ৪ উপজেলার মধ্যে ৩ উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বর্তমান সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বলয়ে। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন ছাড়া কাউকেই রতনের পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দেখা যায় নি।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোদাচ্ছির আলম সুবল বললেন, দলীয় দায়িত্বশীল নেতা কর্মীরা এখন আর তাঁর সঙ্গে নেই, এজন্য রতন নির্বাচন করবেন কীনা দুটানায় আছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু জানান, এমপি রতনের পক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। দুয়েক দিনের মধ্যেই দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করা হবে। এরপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস বলেন, ভোটার হবার পর থেকে সকল জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি। আমার মতো কর্মী যারা আছে, কেউই নৌকা ছাড়তে পারবেন না।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম জানান, এমপি রতনের নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে, কর্মীরাও মাঠে আছেন। দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে কথা বলেই রতন নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ধারণ করবেন।
সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন জানান, কর্মীরা সকলেই আমার সঙ্গে আছেন। দলের ৪ উপজেলার মধ্যে ৩ উপজেলার সভাপতি ও সম্পাদক আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জামালগঞ্জের সভাপতি, সম্পাদক, তাহিরপুরের সভাপতিসহ সকলেই আমরা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেব, যা করি ঐক্যবদ্ধভাবে করবো। দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করবো, তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন, সেই অনুযায়ী এগুবো। সভানেত্রী ছাড়া অন্য কারো কথায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করবোনা আমি।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. রনজিত সরকার জানান, নির্বাচনী এলাকাজুড়ে নৌকার পক্ষে আওয়াজ ওঠেছে। ভোটের মাঠে যারাই থাকুন না কেন জয় নৌকারই হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমদ বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ভোটারদের চাপে প্রার্থী হয়েছি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দলের সভানেত্রীও চান। নেত্রীর নির্দেশনা পালন করতেই ভোটে থাকবো।
শেয়ার করুন